এক.

চারিদিক কালো করে হটাৎ ঠান্ডা বাতাস শুরু হলো।  বৃষ্টি আসার লক্ষণ। ধমকা বাতাসে ধুলা বালি উড়ছে I উড়ছে গাছের পাতা, পলিথিন, খবরের কাগজI একটা পাগল রাস্তার ঠিক মাঝখানে আইল্যান্ড এর উপরI আধা ন্যাংটাIসামিরা দোতালার বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি আসা দেখছেIএক ফোটা দু ফোটা করে বৃষ্টি নামার শুরু হলোIএক সময় ঝুম বৃষ্টি নামলো I

এখন কি মাস ? চৈত্র I এই সময় তো এই বৃষ্টি হওয়ার কথা না I সামিরা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোটা ধরতে চেষ্টা করে I ঘন বৃষ্টিতে হাতের বাহু পর্যন্ত ভিজে যায় I  ইচ্ছে করছে পুরো শরীরটা বাইরে বের করে দিতে I সম্ভব না, বারান্দায় রেলিং দেয়া I এখন চারিদিকে যে অবস্থা রেলিং ছাড়া বাড়ি করা ও যায় না I সামিরার বড় ইচ্ছে একটা  বড় বাড়ি করবে যার কোনো রেলিং থাকবে না I মাথার উপরে থাকবে স্কাই লাইট I পূর্ণিমা রাতে বিছানায় বসে চাঁদ দেখবে I চাঁদের আলোয় ভাসবে পৃথিবী; তার মাঝে এক অপ্সরী বসে আছে I সেটা এক অপূর্ব ছবি হবে I এই ছবি কে ভালো আকঁতে পারবে? সুমন ? সুমনকে বলে দেখলে হয় I ও অনেক ভালো ছবি আঁকে I সুমনের সাথে পরিচয় হয় ট্রেনে I  ট্রেনে যাচ্ছিল রাজশাহী I সোমাকে পৌঁছে দিতে I পথেই এঁকে ফেললো -সিল্কসিটি এক্সপ্রেসI পেন্সিল স্কেচ I জীবন্ত এক ট্রেনের ছবি I মেডিকেলের অনেক  মেয়েই এই ছবি দেখেছে I কেউ কেউ কিনতেও চেয়েছেiসোমা দেয়নি i

মাঝে মাঝে কিছু জিনিস মাথার ভেতর পোকার মতো ঢুকে যায় I ছবির ব্যাপারটা ও তাই I

অনেক খোঁজাখুঁজি করে সুমনকে পাওয়া গেলো  নিউ মার্কেটে এক ওয়েডিং শপে I সে দু তিন টা বিয়ের ডেকোরেশনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত i তার মধ্যে একটা বিয়ে আবার সেনাকুঞ্জে i কোনো এক আর্মি জেনারেলের মেয়ের বিয়ে i উনিশ বিশ হলে  খবর করে দেবে i সুমন ছবি আঁকার কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠলো

-বলো কি! আমার নিশ্বাস নেয়ার সময় নেই; তোমার ছবি আঁকবো কখন?

-তাহলে তুমি পারবে না I ওকে ফাইন, আমি দেখি আর কাউকে পাই কিনা i

সামিরা নিউ মার্কেটের সাজঘর নামের এক দোকান থেকে বের হয়ে রিকশা নেয় I কাটাবন এসে দেখে ভীষণ জ্যাম - শাহবাগ পর্যন্ত I পিঁপড়ার গতিতে গাড়ি যাচ্ছে I সামনে দোতলা বাসে বাদুড়ঝোলা মানুষ I এতো ব্যাস্ততায় মানুষ দিশেহারা আর সে কি না খুঁজছে একটা ছবি আঁকার মানুষ I পাগলামিi হোক পাগলামি তবুও শখ বলে কথাIশখের দাম লাখ টাকাI

 

দুই .

-এই, এ ঘরে কে ঢুকলো ? কে রে ? সামিরার দাদা নাজিমুদ্দিন সাহেব ঠিকমতো চোখে দেখেন না I কানে ও কম শুনেন I তার কাজ সকাল থেকে সন্ধ্যা সোফায় বসে থাকা I আর কে আসলো গেলো তার একটা ছোটোখাটো পরিসংখ্যান রাখা I এই কাজ তাকে কেউ দেয় নি I তিনি যেঁচে নিয়েছেন I তবে সমস্যা হলো তার জ্বালায় আত্মীয়স্বজন আসা ও বন্ধ হয়ে গেছে I দুনিয়ার কথা জিজ্ঞেস করেন I মানুষ বিরক্ত হয় I

এতো সকালে সামিরার খোঁজ কেন ?

একটা ছবি আঁকার কথা বলেছিলো....

ছবি? কিসের ছবি? সিনেমা I সামিরা সিনেমা করবে I ছি ছি ছি 

সুমন কি বলবে বুঝতে পারে না I  অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে I ইচ্ছে হচ্ছে বুড়োটাকে ধরে বিছুটি পাতা ডলে দিতে I বিছুটি পাতা কোথায় পাওয়া যায় তার ধারণা নাই I বানরের শলা সম্পর্কে ধারণা আছে I তাদের হোস্টেলের সাথের কুল গাছটায় I  প্রচুর I

চিৎকার শুনে সামিরা বের হয়ে আসেIদাদা ও আমার ফ্রেন্ড এর কাজিন I ছবির পরিচালক না I ছবি আঁকে I 

সুমন সোফায় গিয়ে বসে I এদের বসার ঘরটা অসম্ভব সুন্দর I মনে হয় কোনো ডিজাইনার দিয়ে করা I  আকাশের ভাব তৈরি করা হয়েছে I সকালের সূর্য I এক পাশে টুকরা মেঘ I সম্ভবত হার্ডবোর্ড কেটে করা I পুরো সিলিং টা হালকা নীল I ছোট ছোট তারার মতো বাতি দেয়া I ছবি নিয়ে কথা উঠে I সুমন বললো

-সময় দিতে হবে I

-আচ্ছা সময় দেয়া হলো বাট আমি পাস করে এসে যেন ছবি রেডি পাই I

-তা পাবে কিন্তু আমার তো কিছু ছবি তোলা লাগবে I এখন শট দিতে পারবে ?

-কোথায় তুলতে চাও?

-বেশ আলো আছে এমন কোনো রুমে I

আলো থেকে অন্ধকারে ছবি ভালো আসে I সুমন আলো আঁধারির খেলা আর এপারচার মিলিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি তোলে I অদ্ভুত সব ছবি I একটা ছবিতে সামিরা হাসছে I   ডাগর চোখের মোহময় হাসি I সে হাসি সুমন যদ্দুর পারে তুলে আনলো নিকন ডি ফোর ক্যামেরায় I সামিরাদের বাসা থেকে বের হয়ে আসে  তড়িঘড়ি করে I  ক্লাস ধরতে হবে I মঈন  স্যারের  আর্কিটেকচার অফ হিউমান সিভিলাইজেশন ক্লাস I স্যারের বড় বদ অভ্যাস I সবার সামনে পড়া ধরেনI

সুমন ক্লাসে ঢুকে সোজা পেছনে গিয়ে বসে I ক্লাস একদম চুপ I মঈন স্যারের মুখটা আজকে আরেকটু বেশি গম্ভীর I স্যার শ্যামলীকে দাড় করালেন “এই যে আপনি বলুন তো সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশে পাখি গুলো কিভাবে আসে?” শ্যামলী এমন ভাব করলো যেন এ ধরণের আজব কথা সে জীবনেও শুনেনি I “ওহ নো ইউ আর নোট এট অল ইন দা ক্লাস I রোমিং সাম হোয়ার  এলস I  আর কেউ বলতে পারেন?”  পেছন থেকে কে একজন বলে উঠলো “টীম ওয়ার্ক” I এক্সাক্টলি Iস্যার বললেন পাখিগুলো একটা গ্রুপে থাকে বলে এতো লম্বা পথ ওদের গায়ে লাগে না I ঠিক এভাবেই মমি আর  স্পিংক্স এর মতো স্থাপনা গুলো তৈরী হয়েছে

 

তিন

অনেক দিন পর সামিরার ফোন পেলো I তাকে মনে হচ্ছে খুৱ খুশি কোনো এক ব্যাপারে I

-এই সুমন তোমার বোন তো প্রেমে পড়েছে !

-কার প্রেমে  ?

-আগে পাকাপাকিভাবে হোক তারপরে বলবো I

-তুমি এখন কোথায় I আমরা সাহেব বাজার চাইনিজ খাচ্ছি I

-খাও ভালো করে খাও I মনে রেখো আমার মুখ লাগবে I

-মুখ দিলে দাও I কিন্তু তোমাকে খাওয়ানো হচ্ছে না এখন বলো আমার ছবির কি খবর?

হচ্ছে I সুমন গুল মারলো I আসলে  ছবির কাজ তেমন কিছু হয়নি I কতোটুক করে I আকার পর মনে হয় ভালো হচ্ছে না ছিড়ে ফেলে I আজ রাতে বসবে I  কিন্তু হোস্টেলের ছেলেদের অত্যাচারে কিছু করা যায় না I আবেদীন, আসিফ ও জাফর মিলে প্রতি রাতে কবুতরের মাংস খেতে যায় চাঁনখার পুল I তাকেও সাথে যেতে হয় I এতো রাতে বের হলে পড়াশুনা ঠিকমতো হয় না i কাকে অভিযোগ করবে I বরং বাসায় চলে যাওয়াটাই ভালো I তাদের বাসা তো দূরে ও না I নিকুঞ্জএ I  শুধু হলে পড়াশুনার জন্যই থাকা I বুয়েটের হলে ছাড়া পড়াশুনা  ভালো হয় না এই অপবাদ সে ঘুচাবে I সুমন ব্যাগ গুছিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হয় I হলের গেটে আসিফের সাথে দেখা I সিঁড়িতে বসে কি একটা খাচ্ছে I সম্ভবত গাঞ্জা I ক্লাসে আসিফকে ডাকে গাঞ্জুমামা বলে I  তার ধারণা আসিফ বিকারগ্রস্থ I তা নাহলে এ জিনিস দিনের পর দিন খায় কি করে ?

গান্জুমামার হাত থেকে পালিয়ে এসেও রক্ষা নেই I বাসায় এসে দেখে সোফায় পা তুলে বসে আছেন আশেক ভাই I ফুফাতো ভাই আশেক I ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র I কি মনে করে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেলো শ্রেণী সমতা না কি সব করবে বলে I কাজের কাজ কিছুই হলো না I মাঝখান থেকে ফুফার কিছু সম্পত্তি খোয়া গেলো I সেই থেকে আশেক ভাই বোহিমিয়ান I

কি খবর ছোট জয়নুল ?

 সুমন হেসে ফেলে I আশেক ভাইয়ের ধারণা সুমনের ছবি জয়নুল আবেদিনের মতো I সুমন বার বারই বলেছে : প্লিজ আমাকে ও নামে ডাকবেন না I কে শোনে কার কথা I আশেক ভাই এক ধরণের আনন্দ পান এই রসিকতা করে I পাক I  সুমন বেগ নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায় I ঘরে এসে দেখে চিঠি I তার নামে I টোকিও আর্ট এসোসিয়েশন থেকে I তার একটা ছবি এশিয়ান আর্ট  অ্যাওয়ার্ড এর জন্য মনোনীত হয়েছে I তাজ্জব কে পাঠালো এই ছবি ? সে তো কিছুই জানে না I সুমন কম্পিউটারএ লগ ইন করে এশিয়ান আর্ট এওয়ার্ডের এর সাইট এ যায়I তার সুজনদের বাসায় আঁকা চাঁদপুরের মোহনা ছবিটি টোকিও আর্ট গ্যালারিতে টাঙানো I কার এই কাজ ?

সে ঠিক করে এই নিয়ে বাসার কাওকে কিছু বলবে না I দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয় I

কড়া এককাপ কফি খেয়ে সুমন ছবি আঁকতে বসে I কফির ক্যাফেইন শরীরের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে I  সুমন লজ্জা পায় সামিরার ছবি দেখে I ছবিতে সামিরাকে আরো সুন্দর লাগছে I তার মন উতলা হওয়া শুরু হয়েছে I একেই কি বলে ভাল লাগাIসুমন বিরক্ত হয় নিজের উপর I এই ছেলেমানুষি তো তাকে মানায় না I সে টিভি ছেড়ে বসে I টিভি তে গান হচ্ছে হাবিব আর আনিলার আমার এক পায়ে নুপুর আর অন্য পা খালি I এক সময় এ সব গানের প্রতি ভীষণ ক্রেজ ছিল I এখন সময় পায় না I

 

ডি সি দত্তের গাইনির টেক্সট কিনতে গিয়ে সামিরা সাহেব বাজার গিয়ে আটকে পড়ে I চারিদিকে গোলাগুলি  I দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে I  দোকান পাট বন্ধ I সামিরা এক দোকানে আশ্রয় নেয় I দোকানী ভদ্রলোকের নজর ভালো না I বারে বারে আড় চোখে দেখছে আর অযথা খাতির করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে I সামিরা গায়ের উপর ওড়না টেনে দেয়  I

সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে একবার এ সমস্যা হয়েছিল I ঢাকা থেকে রাজশাহী আসছে I স্টেশনে এসে দেখে তার সিটে অন্য একজন বসে আছে I টিকেট চেক করা হলো I ঠিকই আছে Iএক সিটের বিপরীতে দুই টিকেট ইসু করা I ডিজিটাল মিস্টেক I টিটি কে ডাকা হলো I সমস্যা শুনে তিনি গম্ভীর মুখে বললেন, দেখি কি করা যায়? তিনি কিছুই করতে পারেন নি বরং আসছি বলে লাপাত্তা হয়ে গেলেন I ট্রেন ছেড়ে দিয়েছেI সামিরা অসহায়ের মতো চারিদিকে তাকায় I টাকলা এক ভদ্র্লোক রেল কর্তৃপক্ষকে সমানে গালি গালাজ করছে I এই সময় পেছন থেকে এক যুবক সাহায্যের হাত বাড়ায় I

-কিছু না মনে করলে আমার সিটে বসে যেতে পারেন আমি এদিক ওদিক করে কাটিয়ে দেব i

-বলেন কি নাহ আমি দাঁড়িয়েই যেতে পারবো , থ্যাংকস I

আশেপাশের দু চারজন বলে উঠলো বলছে যখন বসেন না I সামিরা বাধ্য হয়েই বসলো I তারপর.....  হাসিব নামের এ যুবক ঘুরে ফিরে এসে নানা কথা জিজ্ঞেস করে I সামিরা ভদ্রাতের খাতিরে ওঁ আ করে I উপায় নেই ; এই ছেলে মহা ছেঁচড় I নানা ফন্দি ফিকির করছে ভাব জমানোর I  রাজশাহী স্টেশন এসে কোনো মতে ব্যাগ টা নিয়ে দে ছুট I এই ছেলে তারপরও ক্যাম্পাসে এসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে I শেষমেশ ছাত্রলীগের ক্যাডার ইমনকে  ধরতে হয়েছে I ইমন শুনে বললো শালার বেটার এতো বড় সাহস ক্যাম্পাসে এসে তোর খোঁজ করে ?  ধরতে পারলে হাড্ডি গুঁড়া করে দিবো I হাড্ডি গুঁড়া করতে হয়নি I হাসিব কে মনু মিয়ার দোকানের সামনে কান্ ধরে দশবার উঠবস করানো হলো I আর প্রতিবারে বলতে হলো আর কখনো এই ক্যাম্পাসে আসবে না I মনু মিয়া কথার ফাঁকে বললো- ভাইজান উনার যদি অসুখ হয় কোথায় যাবে এটা তো সরকারি হসপিটাল i ইমন ফিচিথ করে পানের পিক ফেলে ধমকে উঠে: এই ফাজিল তুই চুপ করবি I

সামিরা ইমনকে কল করে I

-কিরে তুই কোথায় ?

-আমি সাহেব বাজার আটক পড়েছি I এক দোকানে I চারিদিকে গোলাগুলি I

-চিন্তা করিস না I  আধা ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে I

 

চার

আধ ঘন্টায় ঠিক হয় নি I পাক্কা দুই ঘন্টা আটকে ছিল সে দোকানের ঝাপের মধ্যে I এসে দেখে হলে তার জন্য সবাই বসে আছে I কেউ কেউ খায়নি পর্যন্ত I সামিরার মন খারাপ হয় I তার জন্য এতো মায়া   কি এমন সম্পর্ক এদের সাথে? অথচ যেন জন্ম জন্মান্তের পরিচয় I  সোমা, রাবেয়া, ফাতেমা, জলি সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে I

-কিরে আমার দিকে এমন করে কি দেখছিস?

-তুই ঠিক আছিস তো?

-হা হা বাবা আমি ঠিক আছি I আর না থাকলে কি হতো?

রাবেয়া টিপ্পনি কাটে - আমাদের কিছুই হতো না শুধু সুমন সাহেব দেবদাস হয়ে যেতেন I এই নিয়ে তিন বার কল করেছেন I

-বলিস কি? শুনলো কার থেকে?

-কার থেকে আবার I আমাদের সোমা Iবিবিসি লন্ডনIসব বলে দিয়েছে I 

সোমা বলে -না এমনি কথায় কথায় বললাম I আর শুনে কি কন্সার্ন ও রে বাবা যেন এক্ষুনি চলে আসে I

সামিরা লজ্জা পায় I কিন্তু এ লজ্জা বাড়তে দেয় না I সবাই পেয়ে বসবে I এগুলো যে বানর ! তিল কে তাল করে ছাড়বে I তার মার্ কানে গেলে হয়েছেI বলবেন তোমার আর পড়াশুনা করতে হবে নাIবাসায় চলে যাও I

অতি স্পর্শ কাতর এই মহিলা কে নিয়ে হয়েছে যত জ্বালা I সামান্য কিছু নিয়েই ওভার রিএক্ট করেন I একবার ক্লাস সেভেনে তার বাংলা বইতে কোন একজনের লেখা ''আই লাভ ইউ'' পেয়ে কি কান্ড i

বাবা বললেন- দেখ সোহানা এটা কোনো ছেলের লেখা কি করে বুঝলে ?

বুঝবোনা তোমার ধাড়ি মেয়ের ভাব সiব দেখেই আমি বুঝেছি I উনি নতুন নতুন কাপড় পড়ে স্কুলে যান I সাজুগুজু করেন I

সামিরা সেদিন সারারাত কেঁদেছিলো I লাভ হয় নি, বড়ই কট্টর তার মা I বইটা নিয়ে পরদিনই স্কুলে গিয়ে হাজির I স্যারদের তখন মর্নিং সেশন চলছে I এর মধ্যেই মা ক্লাস টিচার মাহাবুব স্যারকে গিয়ে ধরলেন I স্যার লেখা দেখেই বললেন আরে এ তো কান্তার লেখা I

কান্তা কে পাওয়া যায় নি তখন I সে দেশের বাড়ি গেছে I বেড়াতে I মা পারলে কান্তাকে দেশের বাড়ি খুঁজতে যান I সবার ধরাধরি তে সে যাত্রায় রক্ষা I

কত আগের কথা I এখনো মাকে সে যমের মতই ভয় পায় I যদিও মা বাবা দু জনের কেউই  কাছে নেই I  সৌদি আরবে I ডাক্তারি করছেন I

 

পাঁচ

সুমন এশিয়ান আর্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে I সে এসেছে জাপানীস এম্ব্বেসির টেলিফোন পেয়ে I কোনো  জাপানীস এতো  ভালো  বাংলা  বলতে  পারে  তার ধারণা  ছিল  না  I এম্বেসেডর শিরো সাদোশিমা তার  ধারণা  পাল্টে দিলো I তিনি পরিষ্কার বাংলায় বললেন -মিস্টার আন্দালিব সুমন কংগ্রাচুলেশন I তুমি এশিয়ান আর্ট এওয়ার্ড জিতেছো I ওয়ান মিলিয়ন ইয়েনের অ্যাওয়ার্ড I

সুমন বসে আছে তার সামনে I খুব সুন্দর একটা ফুলের ঘ্রান আসছে I সামনের বুকে থেকে I অনেক গুলো তাজা ফুলের একটা বুকে তার সাথে এ-সিক্স সাইজের একটা এনভেলপ I

এর ভেতরে তোমার সব কিছু আছে অ্যাওয়ার্ড লেটার, টাইটেল, ভেন্যু, হোটেল রেজারভেশন I  ভিসার ব্যাপারে আমাদের ফার্স্ট সেক্রেটারি তোমার সাথে যোগাযোগ করবে I  ও হা, ইচ্ছা করলে তুমি একজন স্বজনকেও সাথে নিতে পারো I

স্বজনকে নেয়া যাবে বাহ্ বেশ ভালোই তো I মাকে নিয়ে গেলে কেমন হয়? যাওয়ার দিন চমকে দিয়ে বলবে - মা চলতো জাপানটা ঘুরে দেখে আসি I

-বলিস কিরে বাবা আমি জাপান যাবো কিভাবে? আমারতো পাসপোর্ট নেইI

-পাসপোর্ট নেই তো কি হয়েছে আমার নাম শুনলে এমনিই ঢুকতে দিবেI

-যাহ তোর সব পাগল পাগল কথা I

পাগল পাগল কথা প্রায়ই সে মাকে বলে I মা এগুলো বিশ্বাস করেন না I এবার বিশ্বাস করবেন I সে ঠিক করে মার্ জন্য পাসপোর্ট করবে না জানিয়েই I এজন্য দরকার আশেক ভাইকে I আশেক ভাই এসব কাজে ওস্তাদ I

 

ছয়

পত্রিকার এক সাংবাদিক বসে আছেন সুমনদের ড্রয়িং রুমেIমাঝারি বয়সi ভারী চেহারা I জিন্স আর টি শার্ট পরা I চোখে সবুজ ফ্রেমের চশমা I সুমন দেখে বললো, আপনি?

-পত্রিকার অফিস থেকে এসেছি আপনার ইন্টারভিউ নিতে i

-আমি তো ভাই একটু ব্যস্ত আজকে i আমার কিছু গেস্ট আসার কথা

-গেস্ট আসবে I কখন ?

-এই ধরেন ঘন্টা খানিকের মধ্যে

-তার আগেই আমি শেষ করবো I

ভদ্রলোক কথা রাখলেন I যাওয়ার আগে বলে গেলেন আবার এসে গল্প করবো I সুমন অবাক হয়I তার সাথে মানুষ সহজে কথা শেষ করে না I কিছু বেঁধে রাখে I ক্লাসের ছেলেপেলেরাও তাই I এ নিয়ে প্রায়ই সমস্যা হয় i

সুমনের ইন্টারভিউটি পত্রিকায় ছাপা  হয়েছে i ক্যাপশন : সুমনের আঁকা মোহনার জাপান জয় I ভেতরে লেখা সুমনের আঁকার বিষয় প্রকৃতি I ‘মেঘনার বুকে পাল তোলা নৌকা, গাংচিলের ওড়াউড়ি আর ঢেউ এর দোলায় নৌকার নাচন ফুটে উঠেছে সুমনের ক্যানভাসে I এ যেন জীবন্ত এক বাংলাদেশ I আমাদের চিরচেনা বাংলাদেশ এখন সুদূর জাপানে মানুষের মুখে মুখে I তবে অবাক হবার বিষয় সুমন এই কম্পিটেশন এর ব্যাপারে কিছুই জানতো নাI সব করেছেন তার মা মিসেস আনোয়ারা বেগম I

আমরা আনোয়ারা বেগমের সাথে কথা বলি I কথার ফাঁকে তিনি জানান সুমনের বেড়ে উঠা, ছবি আঁকার শুরু, সুমনের বাবার মৃত্যু থেকে অনিশ্চয়তার মধ্যেই এগিয়ে যাওয়ার এক সংগ্রামী গল্প I’

 

সাত

সামিরার মেজাজ ভালো না I সে রেগে আছে তার রুমমেটের উপর I এই মেয়েটা গত রাতে তাকে ঘুমুতে দেয় নিIসারা রাত ভর ভর করে পড়েছে I মাঝরাতে সে একবার বলেছিলো-  প্লিজ একটু আস্তে পড়বে?

-জি আপু আচ্ছা

বলাই সার I কিছুক্ষণ আস্তে পড়েছিল তারপর আবার সশব্দে পড়া  শুরু করলো I জুনিয়র মেয়ে শক্ত করে কিছু বলতেও পারে না I খুব ভোরে সুমনের ফোন পেয়ে তার মন ভালো হয় I

-কি করছো ?

-গান গাচ্ছি I গান I রাতে ঘুম হয় নি তো তাই আনন্দে গান গাচ্ছি I

-বুঝেছি তোমার মেজাজ খারাপ I আচ্ছা ভিডিও টা অন করো I দেখি মেজাজ ভালো করা যায় কিনা

সামিরা ভিডিও অন করে I পরিষ্কার ছবি I ভোরের আলোয় কোনো এক কারণে মেয়েদেরকে অদ্ভুত  সুন্দর দেখায়; তার  উপরে ঘুম ঘুম চেহারা

-ওয়াও সামিরা তোমাকে তো অপরূপ লাগছে I

-এটা বলার জন্যে কি তুমি কল করেছো ?

-না আরো কিছু বলবো

-বলো

-সরি বলতে পারছি না I লজ্জা লাগছে I

সামিরার ক্লান্ত মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে I তার মন আস্তে আস্তে ভালো হতে থাকে I ফোন রেখে তার মনে হয় ঢাকা গেলে কেমন হয় I সুমনকে স্যারপ্রাইস দেয়া হবে I এমনিতেই অনেক দিন দেখা হয় না I তারপরে সুমনের এখন খবরের ছড়াছড়ি I

কিন্তু সামনে তো ফাইনাল পরীক্ষা I এই মুহুর্তে কোথাও যাওয়া ঠিক না i

খেয়ালি সামিরা সব বাধা তুচ্ছ করে সত্যি সত্যি ঢাকা রওনা হলো I তার মাথায় এখন অনেক  প্ল্যান সুমনকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করবে I আশুলিয়ায় I মাটির পথে হাটতে হাটতে সুমন মুগ্ধ হয়ে তার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাবে i সে কল্পনায় সব ছবি ধরতে চেষ্টা করে আর মনে মনে হাসে i

 

আট

অনেক ঝামেলা করে মায়ের জাপান যাওয়ার ভিসা জোগাড় করা হয়েছে গোপনে Iইন্টারভিউ ছাড়া I এসব সুমনের পাগলামি I হোক না পাগলামি মজা পাওয়া নিয়ে কথা I যাওয়ার সপ্তা খানেক আগে জানা গেলো দিন তারিখ ঠিক হয়েও পিছিয়েছে I সুনামির কারণে I আনোয়ারা বেগম এ  নিয়ে সংশয়ে আছেন  I ছেলে জাপান যাচ্ছে তার  তারিখটাও  পিছালো I যদিও তার এখন একটাই চিন্তা ছেলের বিয়ে I তার শরীর ও ভালো না ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে I এর মধ্যে একদিন মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন বাথরুমে I

সুমন বললো - আর না তোমার জন্য একটা নার্স রাখতে হবে I

-আমার জন্য নার্স রাখবি কেন? তার চেয়ে তুই বিয়ে কর I

-বিয়ে এখন করি কিভাবে? সবে তো পাস করলাম I আগে চাকরি বাকরি হোক

-চাকরি তো তোর হয়েই আছে I

-দেখি আরো ভালো কিছু পাই কিনা I

সুমন দেখাদেখি করে ভালো একটি চাকরি জোগাড় করে ফেললো I লা ভিস্তায় I মালিক ফয়েজ ভাই i ফয়েজ ভাই বললেন - দেখ সুমন, তোকে নিয়ে আমার অনেক বড়ো প্ল্যান আছেI  সে প্ল্যান কি সুমন জানে না I হয়তো আরেকটা ফার্ম দিবে I কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে শেষ বলে কিছু নেই চলতেই থাকেI

 

আজ আনোয়ারা বেগমের শরীর আরো খারাপ I তার কেবলি মনে হচ্ছে তিনি আর বাঁচবেন না I তিনি না থাকলে সুমনের কি হবে ? দুঃচিন্তায় তার ঘুম হচ্ছে না i তিনি শুয়ে আছেন কাঁথা গায়ে দিয়ে I সুমন এসে পাশে বসে I

=কি রে তোর অফিস নেই I

=ছুটি নিলাম I তোমার শরীর খারাপ দেখেI

=সুমন

=বল

=সোমা বলছিলো তুই নাকি ওর কোন বান্ধবীকে

=মা এসব এখন থাক I তুমি আগে ভালো হও

=আমার ভালো হওয়া লাগবে না I আগে বল মেয়েটাকে কি আমি দেখিছি ?

=হা দেখেছো I আমার ঘরে I ছবিতেI

=এই ছবি তাহলে ওই মেয়ের I মাশাল্লাহ I কি সুন্দর I আমি তো ভাবছি তোর কল্পনা I

=কিছুটা তো কল্পনা আছেই I

=এতো সময় নিয়ে আঁকলি কি মনে করে 

=ইচ্ছে হলো তাই

=এ ছবির কথা কি ও জানে ?

=জানে, ও ই বলেছিলো আঁকতে 

-তাহলে দিচ্ছিস না কেন?

-দিয়ে দিবো খুব শিগগির I

-আমি কি ওর সাথে একটু কথা বলতে পারি

-না  পারো  নাI ও না করলে তুমি ইন্সাল্ট ফিল করবেI এটা আমি চাই না

তিনি কথা বাড়ান না I  তার প্রচন্ড হাত পা ঘামছে I তিনি কাঁপা হাতে পানি চাইলেন I

সুমন ঠিক করেছে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে i কিন্তু লাভ হবে মনে হয় না I তিনি ডাক্তারের কথা শুনেন না I তার ধারণা ডাক্তাররা সুগার নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, স্বাভাবিক খাবার ও খেতে দেয় না

 

নয়

সামিরার মা কাউকে না জানিয়েই দেশে আসলেন i মেয়ের বিয়ে দিতে I চারিদিক থেকে নানা কানকথা শুনা যাচ্ছে মেয়ে নাকি প্রেম করে I  তার  শশুর এ  কথা  নিয়ে  তুলকালাম  কান্ড  করে বাড়ি ছাড়লেন I তিনি এ কথা বিশ্বাস করেন না I তার মেয়ে সে ধাঁচের না I ভীতু  I ভীতু মেয়েদের সহজে প্রেম হয় না I এরা নিজেদের ভিতরে সব পুষে রাখে I বলতে পারে না I প্রেমের জন্য দরকার এক্সপ্রেশন i  তিনি ঠিক করলেন অতি সুন্দর একটা ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দেবেন I তবে ছেলে হতে হবে ডাক্তার I ডাক্তার বৌয়ের ডাক্তার স্বামী ; এটা প্রচলিত কথা I তিনি প্রচলিত কথায় বিশ্বাস করেন I 

সামিরার বিয়ের প্রচুর সম্বন্ধ আসছে চারদিক থেকে I এর মধ্যে একটা আবার তাদের আত্মীয় i ছেলে কানাডায় সেট্লড i টরন্টো জেনারেল হসপিটালের ডাক্তার I অল্প বয়স এ এম.আর.সি.পি করা I শুনেছেন দেখতে শুনতে ও ভালো I

সামিরা শুনে বলে - মা এ বিয়ে আমি করবো না I

-করবে না কেন জানতে পারি?  সামিরা জবাব দেয় না

তার মেজাজ খারাপ হতে থাকে I তাহলে কি যা শুনছেন তা সত্যি?

-সামিরা ?

-বলো শুনছি

- তোমার কি কোন পছন্দ আছে ?

-হা আছে I

-ছেলে কি করে ?

-আর্কিটেক্ট I ছবি টবি ও আঁকে

-ছবি আঁকা  ছেলের সাথে তো আমি তোমার বিয়ে দিবো না I

-না দিলে নাই i

-না দিলে নাই মানে তুমি পালিয়ে বিয়ে করবে ?

-মা আমি পালিয়ে বিয়ে করতে চাইলেও ওই ছেলে করবে না

-তার মানে?

-মা শুনো ওই ছেলে আজ পর্যন্ত আমার হাত ও স্পর্শ করে নিI সেখানে পালিয়ে বিয়ে তো দূরের কথা  I

-তোমার হাত স্পর্শ করার কথা আসছে কেন, তুমি কি নায়িকা ?

-আমি নায়িকা হতে যাবো কোন দুঃখে I আমি  তোমার মেয়ে I তোমার আদর্শে বড়ো হয়েছিI  আমার  কাছে  মানুষের  ইন্টিগ্রিটি  অনেক বড়ো I একটা  মানুষ  ভেতরে  যে  কত  সুন্দর ; কেউ ওর সাথে না মিশলে বুঝবে না I  মা তুমি তো  ধর্ম  কর্ম  কর I আমাদের ধর্মে যে মানসিক সততার কথ বলা হয়েছে সে তাই থাকতে চেষ্টা করে I  

তার ভীতু মেয়ের মুখে এতোগুলো কথা শুনে তিনি রাগে কাঁপতে থাকেন I এ রাগ তার বাবার থেকে পাওয়া I তার বাবারও প্রচন্ড রাগ  ছিল I

রাগের মাথায় তিনি ছাদে উঠে আসেন I ছাদের উপরে এক টুকরা ঘর I ছাদের এ ঘরটায় তালা দেয়া থাকে সব সময় I আজ তালা নেই I প্রচুর বই আর হাবিজাবি জিনিসে ভর্তি থাকে I এক সময় সামিরার প্রচুর বই পড়ার নেশা ছিল I দিন রাত পড়ে থাকতো এ ঘরেI এখন থাকে কিনা জানেন না I পুরো ঘরটা সাজানো I পরিপাটি I হেলোজেন এর সাদা আলোয় আলোকিত I তাক ভর্তি বই I একপাশে বিছানা I বিছানার হেডবোর্ড এর উপরে সামিরার একটা ছবি I পোস্টার সাইজের I হাতে আঁকা I নীচে লেখা …… কান্তারা তোমাকে …… সুমন I

তিনি তাকিয়ে থাকেন I একদৃষ্টে I এতো সুন্দর তার মেয়ে ?

সামিরার সেই নজর কাড়া হাসি আর ডাগর চোখের চাহনি I অবিকল I  এতো নিবিড় করে আঁকা I  সুমন নামের ছেলেটার জন্য তার মনটা মায়ায় ভরে যায় I তার বিশ্বাস এই ছেলে তার মেয়েকে সুখী রাখবে I অনেক সুখী I মানুষের বিশ্বাসের উপর কোন সত্য নেই I

নীচে নেমে দেখেন সামিরা বারিন্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে I  আকাশে তখন পঞ্চমীর চাঁদ I তার ম্লান আলোয় অচেনা চারিদিক I সে আলোয় তিনি মেয়ের মাথায় হাত রাখেন I গভীর মমতায় I এ মমতার কোন দিকবিদিক নেই I সীমাহীন I তিনি হালকা স্বরে বলেন

-মারে ছেলেটার বাসা কোথায় ? এখন যাবি চল

সামিরা অবাক করা চোখে তাকিয়ে থাকে

কি বলছে তার মা ? এও কি সম্ভব I

-মা তুমি?

-ভাবলাম এসব করে কি লাভ I তুই যেখানে ভালো থাকবি সেখানেই তো যাওয়া উচিত I উচিত না ?

সামিরা হাসে I এই অর্ণব সময়ের জন্য সে বসেছিল এক দীর্ঘ সময়I

 

দশ

সুমনদের বাসা নিকুঞ্জের একদম শেষ মাথায় I সন্ধ্যার পর এ জায়গাটা অন্ধকার  হয়ে যায় i আজ অন্ধকার নেই i পাশের এক বাড়িতে বিয়ের

আয়োজন চলছে Iতার আলোয় ফর্সা চারিদিক I  বাসার সামনে আমগাছ I সোমা ঠিকানা দেয়ার সময় বলছিলো আম গাছটাই হলো ওদের বাসার নিশানা I  সে  নিশানায়  এসে  মা  মেয়ে  দেখে  ছোট্ট  ছিমছাম  বাসা  মাধবীলতা  দিয়ে ঢাকা I সামিরার মা বলেন সুন্দর তো !

দরজা খুলে সুমন অবাক হয়ে যায় i

-সামিরা তুমি এতো রাতে ?

-সুমন ইনি আমার মা I আমরা তোমাদের দেখতে এসেছি I

সুমন সালাম দেয় I আসসালামু আলাইকুম i

তিনি সালামের জবাব দিয়ে বলেন -কেমন আছো বাবা ? যেন অনেক দিনের পরিচিত I

সামিরা অবাক হয়, তার মা এরকম সাভাবিক ভাবে কথা বলছেন কিভাবে ?  জন্ম থেকে দেখে আসছে মা একটু নাক উচা ধরণের I কোথাও সহজ হতে চান না I তার ধারণা মানুষ বদলায় I সময়ের সাথে বদলায় I

আনোয়ারা বেগম পাগলের মত কাণ্ড কারখানা করছেন I তিনি ভাবেন নি এ দৃশ্য  জীবনে দেখবেন I সামিরাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে দরজার পাশে রাখা দামি ফ্লাওয়ার ভাস ভেঙে ফেলেন I সামিরার মা বলে -ওহ হো ভেঙে গেলো তো i

তিনি বললেন -কিচ্ছু হবে না, দরকার হলে আমি দশটা কিনবো I

রাতের বেলা তিনি রান্না বসালেন i ফ্রীজের মাছ মাংস বের করে একাকার করে ফেললেন I সামিরার মা যতই বলে আমরা খাবো না i তিনি শুনছেন না i সুমন কি করবে বুঝতে পারে না I বোকা হয়ে তাকিয়ে থাকে I

তার কান্ড কারখানা দেখে সামিরা হেসে কুটি কুটি I এ মহিলাকে নিয়ে সে থাকবে কি করে ? তিনি নিশ্চয় দিনের মধ্যে দশবার বকা খাবেন তার কাছে I বকা খেলেও ও সামিরার বিশ্বাস এর মতো মানুষ হয় না I এ ধরণের মানুষ হৃদয় উজাড় করে দিতে জানে I হৃদয় উজাড় করা মানুষের বড় অভাব আজ I

 

এগারো

সামিরার বিয়ে হয়ে যায় চৈত্রের এক জোছনা ভরা রাতে I ধবল জোস্নায় মাখামাখি পৃথিবী I তার মধ্যে এক অপ্সরী বসে আছে I  সুমনদের ঘরের বিছনায় I i সুমন আজ এ ছবি তুলতে যায় না I থাক না কিছু সৌন্দর্য প্রকৃতির নিজের মতো করে I

সামিরা বলে - কি, আমার হাত ধরো I একরকম কাটা হয়ে আছো কেন?

-এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তাই I

-তাহলে দূরেই থাকো I সাবধান, কাছে আসবে না i

তা কি আর হয় ?

বাইরে তখন ডানা ঝাপটায় রাত জাগা পাখি পাশের শিরিষ গাছটায় i সে শব্দ তারা শুনতে পায় না অনেক গল্পের ভিড়ে I

 

বারো

এশিয়ান আর্ট অ্যাওয়ার্ড এ যাওয়ার জন্য সুমনকে একটা টিকেট এক্সট্রা কিনতে হয়েছে I চেক ইন করার সময় সে বার বার বলছিলো তিনটা সিট যেন একসাথে দেয়  I সে ভাবে  দেয়া  হয়  নি  I তারপর দাম টাও একটু বেশি নিয়েছে ; চেরি ব্লসম এর কারণে I চেরি ব্লসম এর সময় প্রচুর লোক হয় জাপানে I সুমনের  মা  এয়ারপোর্ট এ এসে জানলেন তিনিও যাচ্ছেন I খুশিতে তার প্রাণ নেই সাথে I দ্বিধান্বত চোখে তিনি ছেলের দিকে তাকান

সুমন বলে - হা মা, তুমিও যাচ্ছ I

-আমাকে আগে বলিসনি কেন ?

-সব বলে দিলে থাকলো কি ?

-আমার কাপড় চোপড়ের কি হবে I টুথ ব্রাশ টা ও তো আনি নি

সামিরা  বলে - মা  টুথ ব্রাশ এর চিন্তা করতে হবে না I আপনার সব আমি নিয়ে এসেছি I এমনকি ডায়াবেটিস এর ঔষুধ গুলো ও I আর কিছু দরকার হলে জাপান আছে না I

তিনটি তৃপ্ত প্রাণ ঢাকা এয়ারপোর্ট ধরে হেঁটে যেতে থাকে- আনন্দময় এক সময়ের দিকে I যে সময় মধুর  অনুরাগে  ভরা; অন্তহীন I