আইবিএ তে পড়ি... শেষ সেমিস্টার এ আমরা ম্যাকাডাম বলে ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হলাম। আমরা মানে আমি আর কানা চোং (শোয়েব আহমেদ মাসুদ - ভারী চশমার জন্য ওকে এই নামে ডাকা হয়) । এমবিএ পাস করে ভালো চাকরী পাবো -গাড়ী কিনব, এই আশাতেই অগ্রিম প্রিপারেশন। গাড়ী চালানো ভালোই শিখলাম। লাইসেন্সও হলো। প্রথম চাকরীতেই বিএটিএ'র সেলস এর গাড়ী প্রথম মাস থেকেই পেলাম। গাডীতে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রামু থেকে রামগড়, আরিচা ঘাট থেকে রুপসা ঘাট, রংপুর থেকে নবাবপুর, শালবন থেকে সুন্দরবন ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে গাড়ী চালানো থেকে অবসর নিলাম। শুধু ছুটির দিন বন্ধুদের আড্ডায় নিজে গাড়ী চালিয়ে যাই -বাকী সময় জ্যামে বসে গাড়ীর সীটে আটকে সামনের গাড়ী দেখার চাইতে পিছনের সীটে বসে ভাইবারে বন্ধুদের সাথে আড্ডা অনেক বেশী আনন্দের... কিন্তু ছুটির দিনেও কানা চোং এর ড্রাইভারের মুক্তি নাই কারন কানা চোং গাড়ী চালায়ই না।
লাইসেন্স নিয়েও গাড়ী চালায় না এমন আরো একজন আছে - দুরদানা আক্তার, আমার বউ। বিয়ের পড় মহা উৎসাহে দানাকে গাড়ী চালানো শিখালাম। আমার বন্ধুর বউ মহুয়া খুব ভালো গাড়ী চালায়। দেখে আমার খুব ভালো লাগত, চাইতাম দানাও শিখুক। দানা খুব ভালো ছাত্রী - খুব তাড়াতাড়িই শিখলো। একা একাই ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতে থাকল.. তারপর একবার ব্রেক চাপতে গিয়ে এক্সেলেটর চেপে সামনের গাড়ীকে ধাক্কা লাগানোর পর সেই যে গাড়ী চালানো ছাড়লো আর স্টিয়ারিং ধরলই না।
কানাডায় এসে প্রথম বারেই পাস করব এই আশাতেই ছিলাম। তারপরও G না দিয়ে ভাবলাম সহজ G2 দেই ... G2 পরীক্ষা প্রথম বার ফেল করার পর ভাবলাম – ড্রাইভিং টেস্ট একজামিনার মহিলা ঠিকমত বুঝে নাই, পরের বার পাস হবেই।
পরের বারও ফেল করলাম। স্নোর মধ্যে পরীক্ষা হলো, গাড়ি স্লিপ করে গেল - বিপদজনক ড্রাইভিং এর জন্য ফেল। পরেরবার পরীক্ষা দিতে গিয়ে পড়লাম ফ্রিজিং রেইন এর মধ্যে - এই জিনিষের নাম আগে শুনি নাই। অনেক কানাডিয়ান ড্রাইভারও নাকি ফ্রিজিং রেইন ফোরকাস্ট থাকলে গাড়ী নিয়ে বের হয় না। দিব্যি ফেল মেরে গেলাম।
ইনসাফ ভাই, এখনও গাড়ী কিনেন নাই? এই প্রশ্নের উত্তরে নীরব থাকতে হয় ।
পরিস্থিতি আরো খারাপ করার জন্য সামনের ফ্ল্যাটের নীপা ভাবী ড্রাইভিং পরীক্ষা পাস করে ফেললেন। পরের ড্রাইভিং টেস্ট এর ডেট কাউকে বললাম না।
এবার পাস হলো, কিন্তু পাস করেই ভাড়া করা গাড়ী নিয়ে তাড়াহুড়া করে টার্ন করতে গিয়ে এক পার্ক করা গাড়িকে ধাক্কা দিলাম, ২০ বছরের ড্রাইভিং জীবনে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। তারপর গাড়ী চালাতেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে...
পরের সপ্তাহে G পরীক্ষা ... আমার ইন্সট্রাকটর দেশে গেছেন। দিয়ে গেলেন অজয় দা বলে একজন কঠিন ইন্সট্রাক্টর, কঠিম গলায় ধমকা ধমকি করেন। - আপনে বাংলাদেশের ড্রাইভিং এখনো ভুলতে পারছেন না কেন ?
ধমকা ধমকিতে কাজ হলো, আমি পুরানো ড্রাইভিং অভ্যাস থেকে বেরিয়ে এলাম। G একবারেই পাস করে ফেললাম।
বুঝলাম, নতুন কিছু শেখার চাইতে পুরনো শেখা ভোলা আরো বেশী কঠিন।
Unlearn আর Relearn শব্দগুলোর সাথে নতুন করে পরিচিত হতে হল।