Table of Content

Manisha Manjusha
NA
NA
1 articles

অজ্ঞাত অপচ্ছায়া

লেখক: মনীষা মনজুষা Category: ছোট গল্প (Short Story) Edition: Dhaboman - Eid 2018

 

রমজান মাস আগতপ্রায়। তাই আমার সেই অসামান্য অভিজ্ঞতার ব্যাপারটি মনে পড়লো। পৃথিবীতে প্রেতযোনিতে অবিশ্বাস করে একরকম মানুষ নেহাত অল্পসংখ্যক নয়, তবে এ বিষয়ে জানার কৌতূহল কিন্তু অনেকেরই আছে। অবশ্য এটি অজ্ঞাত বলেই বোধহয় আমাদের বিষয়টি নিয়ে এতখানি জল্পনা কল্পনা। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। এ ব্যাপারে জাঁকাল কৌতূহল আমার ছোটবেলা থেকেই। কোথাও কোনো ভূতের বই, সিনেমা অথবা অডিও সিরিজ খুঁজে পেলে সবকিছুর আগে সেটা নিয়ে বসে পড়তাম। বিশ্বাস ছিল সেটা বলবো না, আবার অবিশ্বাসীও ছিলাম না। আমার যুক্তিতে যে বস্তুটির থাকা বা না থাকার কোনো অকাট্ট প্রমান নেই, সেটি নিয়ে কোনো বিতর্কে না যাওয়াই উত্তম। তারপরেও একটি ঘটনা আমার বিশ্বাসকে কিভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল, আজ সেই বিষয়ে লিখতে চলেছি।

 

প্রায় বছরখানেক আগের কথা। এক দিন বিকালে যখন ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরলাম, দিনটি স্বাভাবিক এর চেয়ে একটু বেশি থমথমে বোধ হচ্ছিলো। তার অবশ্য দুটো কারণ ছিল। তখন মে মাসের মাঝামাঝি, ঝড়-বৃষ্টি খুবই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আকাশ জুড়ে দেখি মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। আভাস পাচ্ছিলাম যেকোনো সময়ে প্রকৃতি জুড়ে নেমে আসতে পারে নিদারুণ বর্ষণ। দ্বিতীয়ত আমার বায়োকেমিস্ট্রি ক্লাসে একটা পরীক্ষা নিকটবর্তি এসে গেছে। সব মিলে মানসিকভাবে বেশ চাপের মধ্যে ছিলাম। সন্ধ্যায় খাওয়াদাওয়া সেরে পরীক্ষার জন্য পড়তে বসলাম। কিছুক্ষন পরে শুনতে পেলাম কারা যেন খুব জোরে কান্নাকাটি এবং চিৎকার করছে। শুনেই যথাসাধ্য দ্রুতবেগে নিচে নেমে এলাম। নেমেই দেখলাম যে মা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে?”

মা বললো, “নিচে আমাদের যে ভাড়াটে থাকতো, উনি মারা গেছেন”।

আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। গত পরশুদিন বাসায় ফেরার পথে লোকটাকে একবার দেখেছিলাম মনে পড়লো। লোকটি সবসময় আমাদেরকে দেখলে তার মুলোর মতো দাঁতগুলো বের করে বলতো, “হ্যালো সুইটি”। সেদিনও একই ধরনের আচরণ করেছিল। ওর ঐ অযাচিত স্বভাবের জন্য আমি আর আমার বোন ওকে মোটেও পছন্দ করতাম না। যদিও সামনাসামনি তাকে সর্বদা সম্মান প্রদর্শন করেছি। তাকে আমরা মিল রয় বলেই সম্বোধন করতাম। মিঃ রয় আমাদের বাড়ির নিচ তলায় প্রায় চার বছর ভাড়া থেকেছে। বয়সে প্রবীণ, পরিবারের সাথে কিছু সমস্যা থাকার কারণে সে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সাথে থাকতো না। আমরা অবশ্য ব্যাপারটা অনুমান করতে পারতাম। মিঃ রয় প্রায় প্রতি রাতেই কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসে অসংযতভাবে মদ্যপান করত। বলাই বাহুল্য তাদের মধ্যে বেশ কিছু অল্পবয়স্ক মেয়েরাও থাকত। যাইহোক, এসব কারণে আমরা প্রায়শই ভাবতাম লোকটিকে বাসা ছেড়ে দিতে বলব এবার। প্রয়াস যে একেবারে করা হয়নি তেমনটা নয়, কিন্তু সমস্ত প্রচেষ্টা নিরর্থক হয়ে গেছে। বরাবর তাকে বাড়ি ছাড়ার কথা বললেই সে অনুশোচনা করত আর অনুনয় বিনয় করে বলত সে আর কখন ঐ রকম করবে না।

যাই হোক, মিঃ রয়ের মৃত্যুসংবাদ শোনার পর কেন যেন খুব উদ্বেগ অনুভব করলাম। খুব পরিচিত কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটতে দেখলে সম্ভবতঃ এমনি বোধ হয়। তার পরিবারের কেউই আমাদের বাসায় ঢুকতে দিলো না। পরে পুলিশ এসে মিঃ রয়ের মৃতদেহ নিয়ে গেলো।

 

পরদিন অপরাহ্নে আচমকা কানে ভেসে এলো সেই অত্যন্ত চেনা সঙ্গীত আর গীটার এর ধ্বনি। চমকে উঠলাম! কোথা থেকে আসছে এই আওয়াজ? এমনি করেই তো মিঃ রয় … মনে হতেই ভেতরে ভেতরে থমকে গেলাম। দোতলার ঘরে ঢুকে বোনকে জিজ্ঞেস করলাম সে নিচে কোনো গান শুনতে পেয়েছে কিনা। ও বললো, শোনে নি। ও আমার কৌতূহলের কারণ জানতে চাইলে আমি ওকে সবটা খুলে বললাম। দেখলাম কথাটা শুনে ও নিজেও একটু ভয় পেল। আমি আর বিষয়টি নিয়ে ভাবতে চাইছিলাম না। তাই এড়িয়ে যাবার জন্য হেসে বললাম, “কিছুই নয় রে, বেশী ভূতের গল্প পড়ার পরিণতি। নিশ্চয়ই ভুল শুনেছি।”

 

পরের একমাস উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা নজরে পড়ে নি। রমজান আর ঈদ বেশ নির্বিঘ্নেই কাটলো। কেবলমাত্র নিচতলায় শব্দটা একটু জোরের সাথেই শোনা যেত। যেন কেউ নিচে সজোরে ওয়াশিং মেশিন চালিয়ে রেখেছে। বাবা অবশ্য বলতো এটা কোনো পানির পাইপের গন্ডগোল। ক্রমান্বয়ে আমি বিষয়টাতে খুবই কৌতূহলী হয়ে পড়ছিলাম। মনে হলো এটাই হয়তো অবকাশ অপচ্ছায়া নিয়ে আরও একটু জানার। যারা প্রেতাত্মার কথা বলে তারা তো এই ধরনের ভীতিকর এবং অদ্ভূত ঘটনার উদাহরণই দেয়।

 

যতই দিন যায়, নিচের আওয়াজ বাড়তেই থাকে। সন্ধ্যার সময় থেকে আরম্ভ করে যতক্ষণ জেগে থাকতাম ততক্ষনই আওয়াজ শুনতে পেতাম। এছাড়াও একটি অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। শব্দটা আমি আর আমার বোন একলা বাড়িতে থাকলে অত্যাধিক মাত্রায় বেড়ে যেত।

একদিন বোন বললো, “আচ্ছা তোর কি আজকাল একটু অস্বাভাবিক অনুভূতি হয় না?”

আমি যেন ওর এই প্রশ্নটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। “ঠিক বলেছিস। আমারও কিছুদিন ধরে একটু অপার্থিব বোধ হচ্ছে। মনে হয় সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে কি যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে।”

বোন সাথে সাথে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললো, ”আমিও এরকম অনুভব করি সিঁড়ির কাছে, কিংবা বাথরুমে গেলে।”

এতদিন নিজেকে অপ্রকৃতিস্থ মনে হচ্ছিল। বোনের কথা শুনে সেই আশঙ্কা কেটে গেল। মনে সাহস এনে বোনকে বললাম, ”চল তুই আর আমি বিষয়টা আরেকটু জানার চেষ্টা করি। নাহলে আমাদের কৌতূহল হয়ত কোনোদিনও মিটবে না।”

কথাটা শুনে বোন ও আগ্রহদীপ্ত হয়ে উঠলো। বললো, “হ্যাঁ আমার ও ব্যাপারটি নিয়ে খুব কৌতূহল, যদিও একা কিছু করতে সাহস হচ্ছে না”।

 

অতঃপর আমরা ঠিক করলাম যে কয়েকদিন রাতে সিঁড়ির কাছে ক্যামেরা দিয়ে মনিটর করবো কিছু ধরা পড়ে কিনা। যেমন কথা তেমন কাজ। সেদিন ঠিক রাত বারোটার সময় ক্যামেরা অটো-চালু করে সেটা এমনভাবে রেখে এলাম যাতে সিঁড়িটা স্পষ্ট দেখা যায়। মন বলছিলো কিছু একটা ঘটনা অবশ্যই ঘটবে।

সেদিন রাতে ভালো ঘুম হলো না। ভোর হতেই অবিলম্বে ছুটে গেলাম ক্যামেরার কাছে। রেকর্ডটি দেখতে বসে অবশ্য হতাশা ছাড়া কিছুই মিললো না। দেখলাম ঠিক চার মিনিট তেতাল্লিশ সেকেন্ডের মাথায় রেকর্ডটা বন্ধ হয়ে গেছে।

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “ধুর, কিছুই না। শুধু শুধু পন্ডশ্রম”।

ঠিক তখনই বোন আমার মনযোগ আকর্ষণ করলো শেষ কয়েক সেকেন্ডের দিকে। দেখলাম রাতের প্রগাঢ় অন্ধকারকে যেন আরো প্রকট করলো কোনো এক অজানা অস্তিত্ব। কিঞ্চিৎ আশ্চর্য হলাম কিন্তু কোনো সুরাহা করতে পারলাম না। হয়তো কোনো কারণবশতঃ ক্যামেরাতে একটু ছায়া পড়েছে।

বোন বলল, “চল, আজ আরেকবার দেখি কি হয়।”

 

সেদিন রাতে আবার ক্যামেরা চালিয়ে রেখে এলাম। পরদিন সকালে যখন রেকর্ডটা দেখতে বসলাম, বিচিত্র ব্যাপারটি আবারও লক্ষ্য করলাম। সেই একই সময় পর্যন্ত রেকর্ডটি চালু ছিল। তারপর একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন কিছু আসার পরেই ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়। একটি বিষয় পরিষ্কার হল, সেই রহস্যময় সত্ত্বা যাই হোক না কেন সে আমাদের কাছে তার অস্তিত্ব প্রকাশ করতে আগ্রহী নয়।  

কাজেই বিষয়টিতে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভাবলাম, রহস্যময় বস্তুটা যাই হয়ে থাকুক না কেন, আমরা যদি মাথা না ঘামাই তাহলে একসময় আপনি থেকেই সব বন্ধ হয়ে যাবে।

 

কিন্তু তাতে সমস্যা একেবারে মিটলো না। আত্তয়াজ ক্রমশই বেড়ে চলছিল। এ পরিস্থিতি এমন হলো যে রাতে একা একা বাইরে যেতেও গা ছমছমে অনুভূতি 

হত। শুনেছি যখন পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে কিছু বোঝা যায় না তখন ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের উপরে নির্ভর করাই মঙ্গলজনক। আর আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আভাস দিচ্ছিলো যে রহস্যময় অস্তিত্বটি আছে সেটি আমাদের কোনো অনিষ্ট করার জন্যই রয়েছে। ইতিমধ্যে আবার বাড়ি ভাড়ার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন দেয়া হলো। অনেকেই দেখতে এলো। তবুও শেষ পর্যন্ত কারো সাথেই কথাবার্তা বেশীদূর এগুলো না। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় মাথায় আসছিলো না। অবশ্য নিজেদের বাড়ি ছেড়ে কোথায়ই বা যাব? আর যদি বিক্রি করার সময় আবার কোনো ঝামেলা হয়? এইসব ভেবে প্রচন্ড উদ্বেগ বোধ হচ্ছিল।

 

এক রোববার সন্ধ্যায় বাবা মা একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। আমাদের দুই বোনের হৈচৈ খুব একটা ভালো লাগে না। তাই আমরা বাড়িতেই ছিলাম। আঁধার নেমে আসতেই আবার শব্দ শুরু হলো। ঠক- ঠক -ঠক -ঠক! ভাবছি এই অপশক্তিটি কেন আমাদেরকেই শুধু হয়রান করছে? কি এর প্রকৃত উদ্দেশ্য? পরমুহূর্তেই মাথায় এক দুর্বুদ্ধি এলো। ইনভেস্টিগেট করার ইচ্ছাটা পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। বোনকে বললাম, ”চল তো একবার ভুতকে ডেকে দেখি?”

বোন রাজী হয়ে গেল। দু’জনে তৎক্ষণাৎ নিচের সিঁড়িতে গিয়ে দাঁড়ালাম। ওই সিঁড়িটার তলায় মিঃ রয়ের বারান্দা, যেখানে দাঁড়িয়ে সে প্রায়শঃই হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে গান করত। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি একটু অদ্ভুত অনুভব করছিলাম।  আমার ঠিক উপরের সিঁড়িতে আমার বোন দাড়িয়ে।

নীচের দিকে তাকিয়ে জোরে ডাকলাম, “মিঃ রয়! আপনি কি বাসায়?”

সাথে সাথেই সিঁড়ির নিচের সেই বারান্দা থেকে ভেসে এলো অবিকল তার কন্ঠস্বরের সেই গান। ভীষণ ভয় পেয়ে দৌড়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেলাম। তখনও নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না। আমার সমস্ত অস্তিত্ব যেন কেঁপে উঠল। ঠিকই শুনেছি তো, নিজেকে প্রশ্ন করি। কিছুক্ষণ পর নিজেকে একটু সামলে নেবার পর লক্ষ্য করলাম আমার বোনও অস্বাভাবিক রকমের ভয় পেয়েছে। বুঝলাম যে আমি একা নই, আমার বোনও সেই গান শুনেছে। অল্পক্ষন পর আবার নীচ থেকে সেই অতি পরিচিত গলার কাশির শব্দ শুনতে পেলাম দুজন।

কয়েক মিনিট পর দুজনে একটু স্বাভাবিক হলাম। আমি দূর্বল গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, “হ্যাঁ রে, এবার কি করবো?” 

বোন বলল, “চল, আমরা কিছু ধর্মীয় জিনিষপত্র রাখি আমাদের ঘরে আর সিঁড়ির সামনে। যদি ঐ অপশক্তির খারাপ কোনো মতলব থাকে তাহলে ওগুলো আমাদেরকে রক্ষা করবে।”

কথাটা শুনে খানিকটা ভরসা পেলাম। সেদিন অবশ্য ঘর থেকে দু’জনার কেউই বের হলাম না। রাতে আমার আর ঘুম আসছিলো না। অনেক দুর্ভাবনা এসে মাথায় ভর করছিল রাতের অন্ধকারে আর নিঃশব্দতায়। কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছিল না যে কেন এই অপশক্তি আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছে? কি এর অভিসন্ধি? ঘড়িতে দেখলাম রাত তখন তিন টা সাত। হঠাৎ ছাদের দিকে নজর যেতেই 

স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। একি! পুরো ছাদ জুড়ে একটা বিকট, ভীতিকর মুখ। এক জোড়া কুৎসিত চোখ ব্যঙ্গ ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। তার মুলোর মতো জঘন্য দাঁতগুলো সেই অন্ধকারেও ঝিকিয়ে উঠছিল। তাপর হঠাৎ করেই সেই ভীতিকর মুখখানা আধারে মিলিয়ে গেলো। আমি যে কাউকে ডাকব সেই শক্তিও আমার আর ছিলো না। বাকি রাতটুকু নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এক আঠালো বস্তুর মতো বিছানার সাথে আটকে থাকলাম।

 

ভোর হতেই ঠিক করলাম আর বিলম্ব নয়। ঘরের একটি স্থান পরিষ্কার করে সেখানে কোরান শরীফ রেখে দিলাম। সেইদিন বিকেলে বেরিয়ে সিঁড়ির জন্য কিছু আরবি লেখা নিদর্শন আর আমাদের দু’ই বোনের জন্য দুইটা আল্লাহু লেখা লকেট কিনে নিয়ে এলাম।

 

তারপর আমরা আর কখনো ওই অপচ্ছায়ার উপস্থিতি অনুভব করিনি। তবে হ্যাঁ, প্রায় একমাস ধরে প্রতি রাতে কিছু একটার সজোরে দেয়ালে ধাক্কা খাবার মত আওয়াজ পেয়েছি। এমন মনে হতো যেন কেউ সিঁড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু কোন কিছুতে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাচ্ছে।

 

তার কিছুদিন পর বাবা নিচের ঘরটা পরিষ্কার করতে শুরু করলো। মিঃ রয় মারা যাবার প্রায় আট মাস পর আমরা নতুন ভাড়াটে পেলাম। পরিস্থিতি অনেক পালটে গেল। আমরা আর সেই বিদেহী অস্তিত্বের উপস্থিতি অনুভব করি নি।

যে ঘটনাটি বললাম, শুনে অনেকেই হয়তো ভাববে বুজরুকি কিংবা বেশি ভয় পেয়ে উল্টো পাল্টা শুনেছি। এই অভিজ্ঞতা যে ব্যক্তিগতভাবে উপলব্ধি না করবে, তার পক্ষে হয়তো বিশ্বাস করাটা মুশকিল। তবে একটা বিষয়ে বলতে পারি, ভূত যে আছে এটি আমিও হয়তো এখনও সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি না। তারপরেও আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের চেনাজানা এই পৃথিবীর মাঝে নিশ্চয়ই এমন অনেক অজানা, দূর্বোধ্য এবং রহস্যময় বস্তু লুকিয়ে আছে যা আমরা এখনও পরিষ্কারভাবে বুঝি না, যার সঠিক পরিচয় আমাদের কাছে এখনও সম্পূর্ণভাবেই অজ্ঞাত।