স্বপ্ন
ভোরের আলো ফোটবার আগেই
ফ্যাকাশে অন্ধকার যখন লুটোপুটি করে, জানালার ফাঁকে,
ঠিক সেই সময়ে একটা স্বপ্ন আসে মৃদু পায়ে
আমার শিয়রে,
কুয়াশা জড়ানো একটা হলদে শর্ষে ক্ষেত,
যেথায় শিশির ঝরে টুপটাপ,ঠোঁট ডুবানো পথের ঘাঁসফুলে একটি ভোরের শালিক,
আঁচলে ফুল কুড়ানো একটি কিশোরী মেয়ে,
শুধুই আমাকে হাতছানি দেয় একটি বুনট দিনের
স্মৃতি রোমন্থনে।
বৈঁচি ফুলের মাতাল ঘ্রানে কিংবা
বেতফলের কাঁটার আঘাতে
এক কিশোরী স্বপ্ন বুনে, আঁচল ভরা শিশির কুড়িয়ে।
রিন রিনে ঐ সূর্যোদয়ে, ছুটছে মেয়েটি মেঠো পথে
মুঠোয় ভরে রাখতে চায় সে এক আজলা কুয়াশা ধরে।
দুপুরবেলা রোদটা একটু পানসে হলে,
সেই কিশোরী,মগ্ন হতো পা ডুবিয়ে পদ্ম জলে,
আপন মনে গাঁথতো মালা,কুড়িয়ে পাওয়া হিজল ফুলে।
কখনও তার পড়তো মনে,দখিনের ঐ বাউলা বাতাসে
হাটুরেরা যখন ফিরবে ঘরে,ক্লান্ত দেহে
দু'পয়সার রেশমি চূড়ি আর একটা পাতার বাঁশী
এটা যে তার চাইই চাই।
কিংবা কখনও তার বেলা কেটেছে অলসভাবে,
পলেস্তারা খসা পুরানো প্রাসাদে,
কত গল্প,কত কাহিনী যেনো ইটের ভাঁজে ভাঁজে,
হাতরে বেড়াতো শূন্য দেয়ালে,গল্পগাঁথার শঙ্খধ্বনি,
স্মৃতির মালা গেঁথে যেনো বিভোর কাটে সময় তার।
আচমকা ঝড়োমেঘে স্মৃতির ধুলো উড়ে শূন্যতায়,
তাই বহুকাল পরে,স্বপ্ন আসে,বারে বারে
কবে কোন জলছবি, মস্তিকে অনুরণন তোলে
অবিরাম।
এটা কি নস্টালজিয়া!
তাহলে ভোরের বাতাসে এ কোন স্মৃতির সুবাস আসে
আমার ঘরের শূন্য করিডরে,
আমাকে ডুবিয়ে দেয়, নৈঃশব্দ্যের বিমুগ্ধ চেতনায়!
ডুবে যেতে যেতে আমি অনুভব করি,
কোন এক উজ্জ্বল স্মৃতিময় আলো,
নিভৃতে আমার বন্ধ কুঠুরিতে
খেলা করে অনির্বাণ।।
♠♠ কোথাও নেই আমি!
আমি হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে,অচেনা কোনো ভূবনে,
কোথাও নেই আমি!
কবিতার পান্ডুলিপি, প্রিয় কোন কাব্য
পড়ে আছে অযত্নে,
জানালার কার্নিশে জমে থাকা বৃষ্টির পানি
ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ছে,
ভেজা হাওয়ায় দুলছে টুংটাং সুরে দরোজার ঝালরগুলি
কোথাও নেই আমি!
ম্লান সুরে বাজছে রবীন্দ্র সংগীত
কে যেন শীষ দিয়ে যায় মাধবী লতায় ঘেরা বারান্দায়
মন খারাপ করে চেয়ে আছে সবুজে ঘেরা আঙিনা।
আমি খুঁজে পাইনা আমাকে
প্রিয় স্মৃতি মাখা দিগন্তহীন মেঠো পথে।
এলোমেলো বৈশাখী হাওয়া
উড়ে উড়ে আমার স্বপ্নকে কি নীলিমায় বিলীন করে দেয়?
আমি খুঁজে পাইনা আমাকে
ঘরের আনাচে - কানাচে,
এই শহরের সুখে-নিদারুণ কষ্টে
আমি নেই,নেই স্বপ্ন,নেই ভালো-লাগা- ভালোবাসা।
কোথাও নেই আমি,
হয়তো আছি ঝরে পড়া কোন শিউলি ফুলের ডগায় শিশিরে ভিঁজে।
♦♦♦ শোনো মেয়ে
মেয়ে চেয়ে দেখো
সকালের সূর্য উঠেছে ঐ ভোরের আকাশে
একমুঠো সুখের আলো নিয়ে।
সকালের সূর্য ছুঁয়ে, কিছু শরতের সাদা সাদা মেঘ পাঠালাম,
তোমার বন্ধ জানালায়,
তুমি খুলে দিও সময় হলে,
মেঘগুলো সব ঝুলে আছে তোমার জানালা জুড়ে।
নিরালা একটা দুপুর পাঠালাম তোমার তরে,
অলস বেলায় ভেবো আমায়,
ধুসর ঘুঘু ডাকা ক্লান্ত অপরাহ্ণ বেলায়, জমবে যখন
স্মৃতির সাগর,
ঢেউ তুলবে আমার গানের সুর,
উদাস তুমি, দেখবে শুধু দূরের পানে
তখন ধুঁপছায়া ঐ রোদের খেলা, গাছের ফাঁকে ফাঁকে।
সন্ধ্যা আসে চুপিসারে, মিষ্টি আলোয় ব্যালকনিটা ভরে গিয়ে,
সন্ধ্যা প্রদীপ দেবার ছলে,
একটু ভাবো কি আনমনে!!
আমি তোমার খুব কাছে রই!!
এলোমেলো বাতাস হয়ে,চুল গুলো কে আউলা করে,
মনের মাঝে একটু প্রেম,
সিক্ত করে যখন দুচোখ তোমার,
আমি তোমার চোখের জলের ধারার একটি ফোঁটা হয়ে
হৃদয়ে জড়াই।
তাও খুঁজছো আকুল হয়ে,
বৃষ্টিজলে টলমল,
তোমার আকাশ অবিরাম ভিজছে দ্যাখো,
মেঘে মেঘে বেলা যে অনেক হলো।
রাত নামছে যেন, সব আনন্দকে বিষাদে ভরে,
তারা গুনে খুঁজো কি আমায়!
চাঁদের আলোয় মায়াবী রাতে!
আমি আছি তোমার খুব কাছে,
একটি তারা হয়ে, চোখের মাঝে।
শোনে মেয়ে, সেই যে আমি হারিয়ে গেলাম দূর অজানায়
খুঁজছো কি তুমি অহরহ!
পৃথিবীর আলোছায়া, গ্রহ- নক্ষত্র তন্নতন্ন করে
অথচ আমি আছি তোমার মাঝে,
তোমার আকাশ জুড়ে
সাদা মেঘের পালক হয়ে,
তোমার চোখের তারায়,
তোমার বুকের মাঝে, যেথায় ছোট্ট একটা হৃদয় থাকে।।
♥ আমি তোমাকেই ভালোবাসি
অবারিত সবুজ মাঠ পেরিয়ে,
মেঠোপথ ছুঁয়ে কাঠগোলাপের পাশে
দাড়িয়ে,
অবাক দুচোখে যখন মায়াবী স্নিগ্ধতা ছড়ায়,
একমুঠো কুয়াশা মাখা রোদেলা আলো,
আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে বলি ও আমার স্বদেশ
আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
জোছনায় ভিজে যায় যখন হাজার তারা খচিত অসীম আকাশের বিশাল জমিন,
আমি অপার হয়ে জানালায় চোখ রাখি,
কি অদ্ভুত রহস্যময়ী আলো খেলা করে গাছের ফাঁকে
ইচ্ছে করে সারারাত এই মন জোছনায় ভিজে ভিজে
এক টুকরো চাঁদকে আঁচলে বাঁধি,
অন্য কোন অমাবশ্যা তিথির তরে,
হৃদয়ে ফোটাই এক ঝাঁক জোনাকি ফুল।
নক্ষত্রের পানে চেয়ে চেয়ে দুহাতে ভরি আলোর কনা,
মনে মনে বলি ও আমার দেশ, আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
বৈশাখের দূরন্তদিনে,
কখনো যদি উত্তাল ঝড় ওঠে,পদ্মা-মেঘনার সংগমস্থলে
আমি ঝড়ের রুদ্রাণী রূপে আপ্লুত হবো,
আমার দেশের বিদ্রোহের ঝান্ডা দেখবো,
শক্তির প্রতিচ্ছবি দেখবো ঐ রুদ্র্তার মাঝে------
ও আমার দেশ, আমি তোমার রুদ্র মূর্তিই ভালোবাসি।
কখনো আবার বর্ষার ভরা নদীতে জল উপচায় কানায় কানায়,
রুপালি ইলিশ চমকায়, মাঝ দরিয়ায় জেলেদের হাতে,
আমি জেলেদের চকচকে চোখে স্বপ্ন দেখি, ভরা বরষার
অথৈ জলের মতো,
আমি এই ভরা জোয়ারের নদীর মতো তোমাকেই ভালোবাসি, ও আমার প্রিয় স্বদেশ।
স্নিগ্ধ রাতে আনমনে পথ চলি যখন বিশাল সৈকতের বালুকা বেলায়,
সফেদ সাগরের ফেনিল জলরাশি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় আমায়,
মন উড়ে চলে যাযাবর গাঙচিলের সাথী হয়ে,
বিমুগ্ধ আমি,প্রকৃতির অভাবিত সৌন্দর্যরূপে ডুবে যেতে যেতে বলি, ও আমার দেশ, আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
আমার দেশ, আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
রাজপথে যানজট ঠেলে নিয়ন আলোর মায়াবী রূপে
ভেসে যাই, যখন ফ্লাইওভারে উঠি,
আত্ম অহংকারে বুক ভরে যায়,এ আমার দেশ,
থাকুক চারিদিকে যতো দৈন্যতা, যতো কুটিলতা,
যতো অসম সমাজ শাষন,
তারপরেও,
মাঝে মাঝে তুমি অপরূপ, তুমি নৈসর্গিক, আমার প্রিয় স্বদেশ,
শত রূপে, শত জনমে আমি তোমাকেই ভালোবাসি, বার বার ভালোবাসি।।
কবি