Table of Content

Ahsan Kamal
NA
NA
3 articles

আহছান কামালের কবিতা গুচ্ছ

লেখক: আহছান কামাল Category: কবিতা (Poem) Edition: Dhaboman - Eid 2018

মা- কথা

 

বিদায় বেলায় বাবা মাকে হেসে কন আমি তবে আসি, রইলো খোকা।

মার বুকে লুকায়ে মুখ, কেঁদে কেঁদে বলি,

ভয় নাই মা, আমি আছি।

দু চোখ মুছি, বুকে শক্ত করি ধরি মা হাসি কয়, বাচা তুমি আছ।

অকুল আধাঁরে হারায়ে পথ, মা কয়, সব দেখি কালো,

বুকে লুকায়ে মুখ, মারে বলি দেখি সব আলো।

কি করে খোকা? তোমার হাসিতে সব আলোয় আলো,

মাথা চুমি মা তুমি কও, আমার খোকা তুমি আছ ।

কড়ি আর কমলের খোঁজে,

ঘুরেছি কত শহর, বন্দরে বন্দরে,

লুকায়ে লয়ে মা তোমারে বুকে,

প্রতিতিতে বল মা তুমি, আমার খোকা তুমি আছ।

কত নীল আলো, লাল ঠোঁট আমায় ডেকেছিল,

মা, আমি যাইনি, সল্লা করি সময়ের কথা গুলি তখন পালিয়েছিল,

মাগো ফিরে এসেছি মায়াময় ক্রোড়ে তোমার,

তুমি হেসে বল, বোকা খোকা, ও খোকা, খোকা আমার ।

কাটিল বেলা পথের বৈরী সব সময় 

কত যতন করি আদরে আদরে খাওয়াতে মা

পুঁটির তেলে ভাঁজা পুঁটি, কৈ’র তেলে কৈ।

মাগুরের ঝোল, কচি অড়হর শীমের ভর্তা আরও কত কি!

চম্পা বনে এক চাঁদপনা মুখ ধরি বল, আমার খোকার বৌ,

লাজে মরি, পাছে বলি আহা আহা।

জানো মা ? তার খোকা তারে মা বলে,

আমি বলি কারে ?

বিলাসী সময় আসি আসি কালে,

ডাকি বল, খোকা? বড় সাধ! পালকি করে যাব দেখতে তারে ।

সফেদ সাদা শাড়ি, আতর, লোবান সাজে,

কাঁধে লয়ে চললাম, মাগো! রাখতে তোমায় বাবার কালো বাসরে।

আমার যত আশা, আমার সব আশ্রয়, কাঁধে লয়ে মাগো ! চললাম,

কলিজায় পাথর বাঁধি, চোখের জলে আল্লারে ডাকি বললাম, 

হে জ্ঞানময প্রভু, তুমি এক, তুমি অদ্বিতীয়, সব তোমারই,

মাকে মাটিতে সৃজিলে, মাটিতে মিশালে, মাটি হতে উঠাবে।

সারি সারি নারকেল, গুবাক তরু, স্বর্ণ-লতা, কামিনী, পাতা-বাহার,

সবুজ ঘাসেরা বিচায়েছে পাটি মায়ের কবরে, বেহেস্ত আমার।

জোছনা রাতে কামিনীর সুবাসে, নারকেল পাতার ফাঁকে 

হেথায় এক ফালি চাঁদ হাসে।

বাদ ফজর মার সিথানে অবনত মস্তকে দাঁড়ায়ে দুহাত তুলি,

কেঁদে কেঁদে বলি, খোদা! কত দিন, কত দিন মাকে দেখি নাই।

পুঁটির তেলে  ভাজা পুঁটি,  কৈর তেলে কৈ, কত দিন খাই নাই। 

দয়াময় প্রভু ক্ষমা কর, ক্ষমা কর আমার মা-বাবারে।

বড় সাধ জাগে মা তোমারে দেখি,

ও খোদা!  মন বড় চায় একবার, শুধু একবার মুখখানা দেখি,

ও মা তুমি খোদারে বল .....মাগো ...।

তোমার খোকারে ছেড়ে কি করে থাকো?

মনে আছে মা? কপট রাগে বলেছিলে লুকোচুরি করি কেন?

খোকা ছাড়া বড় কষ্ট তোমার, তাহলে আজ লুকালে কেন?

মাথার উপর পড়লো এক ফোঁটা ভোরের শিশির,

করলে মা আদর? চোখের জলতো থামে না মা, তোমার খোকার।

জবাই পশুর কষ্ট-কান্নায় মার চরণ জান্নাত ধরি খোদারে বলি,

প্রজ্ঞাময প্রভু, জান্নাত জান্নাতে ছাড়া আর কোথায় নিবে?

হে বিচারদিনের মালিক, তুমি রহীম, তুমি রাহমান,

জনম দুঃখি মা-বাবারে বেহেস্ত করিও দান।

হে খোদা! তোমার রহম ছায়াতলে রাখিও তাহাদের,

যেমন মায়া মমতায় যতনে রাখলো আমারে।

 

তালাশ

 

ধবল জোছনায়,
নির্জনে একা বসে
গোলাপেরে ডেকে বলি, ফোট তুমি!
সারারাত ধরে দেখি,
দয়াময় প্রভু তোমারে খুজি,
সুন্দরে।

তামবুল রাঙানো লাল ঠোঁটে হেসে হেসে তারা ডেকেছিল,
বাউলি বাতাসে যেন মন নেচে ছিল,
চারণ বিলে কামজ্বরে আমি সাজায়নি রঙিন বাসর,
আমার সব শূভ্রতায়, যত ধ্যানে,
রুপময় প্রভু তোমারে খুজি,
সুন্দরে।

কাছের আকাশ আড়ি ভুলে দুরে মাটিরে বুকে টেনে লয়,
সেই সুধা বৃষ্টিতে মাটিতে জাগে জীবনের জয়গান,
তুমি পরম মমতায় সৃজন করিলে না হয়ে সৃজন, তুমি এক, অদ্বিতীয়
নিরাকার প্রভু তোমার অসীম প্রকাশ, আমার সসীমে,
জ্ঞানহীন জ্ঞানে, অনন্ত মহাজ্ঞানী প্রভু তোমারে খুজি
সুন্দরে।

অসীম শূন্যতায়,

তুমিই পরম সত্তা, তুমিই সত্য, তুমিই সুন্দর,

সুন্দরতম।

 

অনন্ত অন্বেষণ

 

স্বপনে সাজাই তোমাকে হাজারবার
রুপালি কামিজ, লাল উড়নায়
নীল শাড়ি, হলুদের মেলায়
বকুলের গন্ধে, জোছনার স্নিগ্ধতায়
রুপের রওশন আবেহায়াত করে পান
হাজারবার তোমাকে সাজাই।

হাজার তারার হাতছানিতে
হাজার মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডার পবিত্রতায়
হাজার পাহাড়ের বুক ফেটে চঞ্চল ঝর্নার হৃদয় ক্ষরনে
হাজার বনের শিশির ভেজা সবুজ পাতার ডগায়
হাজার নদীর মোহনায়, সাগর সৈকতে
হাজারবার তোমাকে সাজাই।

গজল, শের, খুদি, বয়াত, কবিতার ছত্রে ছত্রে
আগুন মুখো, পশুর, মহেশখালীর বাঁকে
চিন্মবুক, বৈজন্তী পাহাড়ের কোটরে
হাজার মতির রওশনে, নুরজাহার গোলাপ খুশবুতে
তোমায় খুজি, হাজার রুপে হাজারবার।

তামাম রাতের কলন্দরের ধ্যান মগ্নতায়
দীঘল দিঘির পদ্ম ফোটার ইবাদতে
চলন বিলের দুরন্ত বলাকার ডানার শুভ্রতায়
আফতাবের শরীরের রুপালি ঠান্ডা তাপে
বেহেস্তি সরাব, সেজদার কুরবানিতে
তোমাকে সাজাই হাজারবার।

তুমি এক পলক চাও
ক্ষনিক হাসো।

 

বসন্ত প্রেম

 

আরশিতে নিজেকে দেখ সখি

সে যে ফাগুন রাতের আগুন সখি

ঠান্ডা কালি রাতে সুন্দরী চাঁদ সখি

নির্মল জলের অমিত ধারা সখি

গোলাপ ফোটার আনন্দ সখি

সে আমারি, শুধু আমারি।

স্বর্নকমল নদে একা একা ভাসাইলাম তরী

গায়ে আগর, তমালের গন্ধ মাখি উঠে বস না সখি

ফাগুণের আগুনে ডুবি ডুবি যাবো মধুবনে সখি

মাতাল হয়ে আড়কোলে তোরে তুলি

চুমি ললাটে, কাজল নয়নে, কপোলে, অধরে - সুধাতে মজি।

সবারই মন চায় দখিণাতে মিলিতে সখা-সখির সনে

এ জীবনে হায় যে সময় কেটে গেল নীরবে নিশিথে

সে বেলা ফিরিবে না, কাটিবে কুঠার বুকের খাজেঁ খাজেঁ

ভাটার টানে আমারও যে মন চায় মিলি তাহার সাথে

বকুল হাতে দিয়ে কব, সখি অশেষ শুভকামনা তোমারে।

যে বাঁশি অহনিশ কাঁদে, যে সুরেতে বেদনা বাজে

সে রাগে সন্ধ্যাতারা সিতারাকে ডেকে বলে

কি করে বাজাই বাঁশি এ মধু বসন্তে?

অবেলায় অনন্য আলোর উচ্ছাসে সোনার শিকল পরি

নীলিম শিতাংশুর সাথে আড়ি আড়ি খেলি বাজাই বাঁশি

বসন্ত প্রেমে।

বোকা প্রেম

কাল তোমায় ডেকে বলেছি ভালবাসি,
আজ কিন্তু তা বলছি না ।
কালকের আমি; আজকের আমি আছি?
আমারোতো ভিড়াতে হয় নাও ঘাটে,
নামাতে হয় সামান; ফিরি ফিরতি পথে।
পরিবর্তন স্রোতে তুমি একাই ভাসাবে তরী?
আমিও পাথর পাহাড় নই চিরকাল একই রবো,
পাশ ফিরবো, মাঝে মাঝে উড়াল দিব,
যে আকাশ তোমারে ছোঁয়না, সে আকাশে আমার আড়ি।

যে প্রেম আমার গাছেদের সাথে,
যে প্রেমে মজি বাদল রাতে,
যে প্রেমে বাঁশি বাজাই কদম ডালে,
যে প্রেমে মরি ফাগুনের চাঁদে,
যে প্রেমে সাজাই তোমারে নিশিথে ।

আরশিতে দেখো নিজেকে সখি,
মুখেতে বলিরেখাতে লুকানো সে প্রেম আমি।
বোকা সে প্রেম বোকা যে আমি,
বোকা সে প্রেমে আজও ভালবাসি।