শুধু তোমার জন্য
কোন এক রাতের স্বর্গীয় আলোয় নিজেকে হারিয়ে
হয়তো বলেই ফেলবো অন্তহীন ভালবাসি,
কোন এক শুক্লপক্ষের ঘোর আঁধারে পথ হারিয়ে
হয়তো বলবো সবচাইতে ভালোবাসি,
কোন এক জোৎস্না বিধৌত পূর্নিমায় বিহ্বল আমি হয়তো বলবো দুরন্ত ভালবাসি,
কোন এক সকালের শুদ্ধ আলোয় পবিত্র হৃদয়ে
হয়তো বলে ফেলবো খুব ভালবাসি,
কোন এক নিরানন্দ তপ্ত বৈশাখের দুপুরে শ্রান্ত কন্ঠে
হয়ত বলবো বড্ডো ভালবাসি,
অবসাদগ্রস্ত কোন সন্ধ্যাবেলায় বিষাদে করুণ স্বরে হয়তো বলবো ভালবাসি ভালবাসি।
এতো ভালবাসি, অনুভবে সে,তবে কেন প্রকাশে দ্বিধা?
এতো আকুলতা আর উৎকন্ঠা নিয়ে কেন নীরবে থাকা?
এতো স্বপ্ন চোখে এঁকে মনের কুঠুরীতে কেন নিস্তব্ধতা?
রংহীন জীবন কষ্টে পেরিয়ে কেন বেছে নিলাম মৌনতা?
নিরানন্দ জীবনে খুসীর হাওয়া আনতে কেন যে বাঁধা?
হারানো আমিকে আবার ফিরে পেতে কেন অক্ষমতা?
হয়ত কেউ বলেনি আমায় ভালবাসে এক ভুবনে যা,
হয়তো কেউ খোঁজেনি পবিত্র এক হৃদয়ের অভিলাশা,
হয়তো কেউ পড়তে পারেনি দুর্বোধ্য এ চোখের ভাষা,
হয়তো কেউ চিনতে চায়নি অচেনা আমিকে সহসা,
হয়তো আমি ঘুমিয়েছিলাম অবেলায় বন্ধ ছিল দরজা,
হয়তো কারো ভালবাসার যোগ্যই কখনও ছিলাম না।।
ভগ্ন হৃদয়
তীব্র বিষাদময়তার কুয়াশায় আচ্ছন্ন হৃদয় প্রান্তর,
বদ্ধ চারিদিক, আসবেনা আশার হাওয়া নিরন্তর।
এতো গান, এতো আনন্দ, প্রানের কলকাকলী,
নকল সুখের আবরনে এক নির্মম ধরণী।
কুয়াশায় ঢেকেছে সূর্য, আলো ফিকে, স্তিমিত,
যতই করিনা আলোর আরাধনা, জীবন মৃত।
তারপর ঘন কালো মেঘের নিত্য আনাগোনা,
ঘনায় আঁধার মননে নেই মুক্তির শুভসূচনা।
জীবন এভাবে যাবে, বিন্দুও যদি বুঝতাম,
সর্বশক্তি দিয়ে নিদারুন দশার সাথে যুঝতাম।
আপণজন বলতে এখন কেউ নেই ত্রিসীমানায়,
টাকার নিত্তিতে আত্মীয়তা, তাই ক্ষণেকে মিলায়।
ক্ষুদ্র চাওয়া
অনুযোগ করিনি বলে,
ভেবনা অভিযোগ নেই।
কোন সময় মান করিনি,
বলে ভেবনা অভিমান নেই।
কিছু মুখ ফুটে চাইনি,
তাই ভেবনা প্রত্যাশা নেই।
শুষ্ক চোখ দেখেছো,
ভেবেছো কোন ব্যথার নদী নেই।
মুখের হাসিটুুকুই দেখেছো শুধু,
দেখনি ক্রমাগত বয়ে যাওয়া
রক্তক্ষরণের লাভা?
ক্লান্ত মুখের বিষণ্ণতা দেখেছো,
চেয়েছো কি তা মুছিয়ে দিতে
দিয়ে পরম মমতা?
শূন্য দৃষ্টি দেখেছ
ভেবেছো কি কেন
দুইচোখে সর্বগ্রাসী শূন্যতা?
তোমার অপারগতা আমি বুঝি,
তাই বলে অবিবেচ্য থাকবে
আমার অপারগতা?
আমি এক অতি সামান্যা
পার্থিব দোষ গুনে মিলানো
ভুলের পাহাড় মাথায় নিয়ে চলা
একা এক মানবী পৃথিবীর পথে,
অনুযোগ, অভিমান, প্রত্যাশা,ব্যথা
সব- সব আছে, নেই শুধু সে
আত্মার আত্মীয়, পরম সখা যে।।
তোমার আমার কথা
তোমার চোখে দেখছিলাম একরাশ মুগ্ধতার দ্যুতি
তাই একদিন চোখের আকুলতায় ব্যক্ত করি সবি,
স্বর্গের পারিজাত নয় চেয়েছি ধরনীর এক ফুল
বিস্মিত চন্দ্রাহত বললে নাচার, আমি করেছি ভুল।
চোখের ভাষা পড়েছ, বুঝেছ হৃদয়ের অস্ফূট কথা
তবে কেনো দ্বিধান্বিত, সংশয়াক্লিষ্ট মনে বিরুপতা?
চেয়েছে ফুল নির্দ্বিধায় আর তোমার ছায়ায় হাটতে
অলীক ভয়ে ফিরিয়ে দিলে তাকে, তুমি কি ভালো থাকবে?
হারাবার ভয় নেই, নেই পিছুটান, ভুল যে করেছে জয়,
হারানোর ভয় দেখিয়ে তাকে কতদূরে রাখা যায়?
চেয়েছে শুধু মন যা তার কাছে অমূল্য এক পাওয়া,
শূন্য হাতে তাকে দিওনা বিদায়, ভবিতব্যের চাওয়া।
ভুল আর নয়
ভুল হবেনা আজকে থেকে
বুঝেছি বুকের রক্ত দিয়ে,
প্রিয়জনকে ভাল রাখতে
থাকতে হবে অনেক দূরে।
আমি এক অভিশপ্ত সৃষ্টি
যা ছুঁয়েছি হয়েছে ধ্বংস,
আগুন ঝরা আমার দৃষ্টি
যেদিকে তাকাই হয় ভস্ম।
নিঃশ্বাসে বিষ বাতাসে মেশে
আশপাশে নেই বিশুদ্ধতা
প্রিয়দের সুস্থ রাখার জন্যে
তাই এ অন্তর্ধাণে যাওয়া।
অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি
না বুঝে, বোধ হারিয়ে জানি,
ক্ষমিবেন না ঈশ্বর নিজে
আঁধারেই গড়বো বসতি।
আমার আত্মার জন যারা
ভেবোনা আমি নিকৃষ্ট অতি,
কোন ক্ষতিই করিনি জেনে
আস্থা ও বিশ্বাস টুকু রেখো।
ব্যথাহত
পৃথিবীর ওপর বিকর্ষণ এতো বেশি বেড়েছে
বাঁচার ইচ্ছা হারিয়েছি কবে কখন কেবা জানে।
চোখ যেন প্রানহীন, যেন মরা মাছ, ঘোলা চোখে
শুধু পথ পানে চেয়ে মৃত্যুর প্রহর শুধু গোনে।
প্রতিদিন কত মানুষ মরে দুর্ঘটনায় পলকে,
অপমৃত্যুর বিষ নিশ্বাস শুনি প্রতি মুহুর্তে।
কখনও শুনি কোন সন্তানহারা মায়ের আহাজারি,
"খোকা কথা বল, বল কেন মাকে ছেড়ে গেলি?"
সাতদিনের নববধুর হাতে মেহেন্দি, চোখে স্বপ্নরাশি
মধু চন্দ্রিমা পালনে যাবে ভীনদেশে নিয়ে স্বামী
হায় রে কপালপোড়া মেয়ে, জানতো কি সে
এ শেষ যাত্রা, জীবন সাথির সাথে সহমরন হবে?
বাবা পৌছুতে গেছেন ছেলেকে স্কুলে এক সকালে
বাবার দিকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে গেল ছেলে
ভেবেছিল কি ছেলেটি, বাবাকে তার এই শেষ দেখা?
প্রিয় বাবাকে কেড়ে নেবে চিরতরে এক রাস্তার দুর্ঘটনা?
এমনি কত শত কাহিনী প্রতিদিন আসে গোচরে,
কতো প্রাণ যায় অকালে, অযত্নে, অবহেলায় ঝরে।
মৃত্যু সে তো অবধারিত, তবু কোন অপমৃত্যু কাম্য নয়,
মানবিক বিবেক জাগবে কবে, উত্তর চাই উপায় নাই।
প্রিয়জনেরা ছিল যখন পাশে মনে হত স্বর্গীয় সব
বাতাসে চাঁপার ঘ্রাণ,চারিদিকে সব উৎসবের ভাব
চির বসন্ত তখন বিরাজমান সঙ্গী করে নিলাকাশ
বুঝিনি পৃথিবীর অসহনীয় রূপ আছে আর এক।
যতদিন যায় পৃথিবীর কঠিন রূপ দেখছি বারবার মুখোস সরে যখন বের হলো আসল রূপ সবার
মিথ্যা দিয়ে সত্য ঢেকে ছিল সবে হয়ে নির্বিকার
হঠাৎ দেখে কদর্য রূপ সত্যের, ঘৃনায় বোধ হারায়।
এখন বুঝি কেন মানুষ জীবনের প্রতি বিমুখ হয়
কেন কিছু মানুষ জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ায়
আত্মহনন কখন অনিবার্য হয়ে সম্মুখে এসে দাড়ায়
যখন মানুষ কঠিনের মুখে দাড়িয়ে দিশা হারায়।
কেউ সপে দেয় নিজেকে চরম মরণ নেশার হাতে
কেউ হয় বোধহীন এক জন্তু সহ্য করতে না পেরে
কেউ হয়ে যায় বাকরুদ্ধ , সত্যের নগ্ন রূপ দেখে
কেউ হয়ে যায় কঠিন, সত্যের কাঠিণ্য ধারণ করে।
সত্যের পৃথিবীতে স্বরাজ করে স্বার্থ নামক বোধ
স্বার্থের হীন টানাপোড়নে সবাই বন্ধ রাখে চোখ
স্বার্থের কাছে সবে নত, তার জয়জয়কার চতুর্দিক
স্বার্থান্ধ হওয়াই রীতি হেথা নইলে বলবে ডরপোক।
পৃথিবী এখন যেমন
পৃথিবীটা,নরকেরও অধম হলো?
পশুত্ব পায় নির্দ্বিধায় জয়মাল্য?
মনুষ্যত্ব পায়না কোন সম্মান,
অনূভুতিরা ক্লান্ত নিয়ে অভিমান।
নির্বিকারে গিয়েছে স্বেচ্ছা নির্বাসনে,
পশুত্বের প্রতাপ চরম আগ্রাসনে।
মানবাত্মা তাই অপমানে ম্রিয়মাণ,
দুরাশাক্লিষ্ট হৃদয়, নেইকি অবসান?
চারিদিক নৈরাজ্য, পৈশাচিকতা, হত্যা,
ধর্ষন, গুমখুন, অরাজকতা, মিথ্যা।
ঘরের বাইরে গেলে আতংক,
ফিরবে ঘরে আত্মজন জীবন্ত?
ঘরের ভিতরেও আশংকা বাঁচে,
স্বার্থপরতা, হিংসা, শঠতার আঁচে।
কোথায় পাবো শান্তির নিকেতণ?
উড়বেনা এত অশান্তির কেতন।
শান্তি, স্বস্তির পাখির অন্তর্ধানে,
বিশ্ব মানবতার ক্ষয় মনেপ্রাণে।
ক্ষমতার লড়াইয়ে পৃথিবীময় যুদ্ধ,
হাজারো প্রাণ অযৌক্তিকতায় স্তব্ধ।
নেতারা বলেন বিশ্বশান্তির জন্য,
প্রানের আহুতি নিতান্ত নগণ্য।
হায়রে মানবতা এখানেই বাকহীন,
নেতাদের পদলেহনে মানবতা হীন।
তাই ব্যথাতুর হৃদয়ের ভাবনা,
কেন আমাদের অমানবিক চেতনা?
আগামী প্রজন্মের ভবিতব্য অজানা,
তাই নিস্ফল চিন্তার অবতারণা।
হয়তো ফিরিয়ে আনবে মানবতা,
আবার পৃথিবী পাবে বাসযোগ্যতা।
হয়ত নিজেরাই বদলাবে অতি,
গ্রহান্তরে গড়বে মানব বসতি।