ইচ্ছের বৈশাখ
ইচ্ছেরা ঝুলে গেছে
কুঠিবাড়ির মানচিত্রে।
বারান্দার খোলা দেয়ালে।
কোন একদিন
সমুদ্র স্নানে ফেরবার আগে
ইচ্ছেরা দুর থেকে হাত নেড়ে বলেছিল
"বিদায় বন্ধু" শব্দ দুটো।
কথার কোলাহল লুকিয়ে রেখে
সাজিয়েছিল তারা
পলক ফেলা ইশারার রঙধনু।
আর আমি!
আমার অভিমানী মনের ঘরে
খুজেছি কালবৈশাখীর পথসভা।
সেখানে শিলাবৃষ্টি মিছিলে নেমেছে
ইচ্ছেদের বারন ভুলে।
ইচ্ছেরা পালিয়ে গেলে
অনেক বেশি একলা লাগে আমার।
চোখ বুজে দিয়ে, আমি তখন
শৈশবের লাল-সাদা ইউনিফর্মের
ভুলে যাওয়া খেলাটাকে খুঁজে বেড়াই।
কোন একদিন সন্ধ্যার নিয়ন আলোতে,
খোলা বারান্দায় ফিরে আসে
আবারো বৈশাখের বাদলা হাওয়া।
খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে
কুঠিবাড়ির ঝুলে থাকা মানচিত্রে
আবারো ছড়া সাজাই আমি,
"বারান্দাতে ইচ্ছের বৃষ্টি
মুখরিত সর্বনাশ,
মনের ঘরে কালবৈশাখী
আর ফাগুনের বসবাস।"
শ্রাবণে চিলেকোঠা
শ্রাবণের ফিরে আসবার
সময় হলো আবারো।
আমার চিলেকোঠার চালে
নেমে আসবে বৃষ্টি।
আমি খুঁজে নেই তখন
ছন্নছাড়া কিছু শব্দ,
বড়জোর গোটা চারেক চয়নের
একটা স্বাগত ছড়া সাজিয়ে দিতে।
আর ধ্রুব খোঁজে তবলা।
খেয়ালী বজ্রপাতের পলক ফেলা আলো আর
চিলেকোঠার ছাদে বৃষ্টিদের বেজে ওঠায়,
খেলার সাথী হতে।
ভিজে যাওয়া জানালায়
আরো ভীড় করে,
ঝুলে যাওয়া বাবুইদের দুষ্টামি।
বাকা গীটারে
ছয় তারের খুনসুটিতে
ঐ দুষ্টামিটা ছুয়ে দেখি আমি।
শ্রাবণের ভেজা চিলেকোঠার টেবিলে,
ভাজ করা নির্বাসিত খোলা খামেরা
এখনো শব্দ খোঁজে।
ভেতরের চিরকুট লিখে দিতে।
আর আমি খুজি অভিধান।
"অবসরের ছন্দ আমার
নেই যে কোনখানে,
গল্প লেখার শব্দ পাব
কোন সে অভিধানে!"
এক পশলা প্রহর
পূথুলা এয়ারপোর্টে
রানওয়ের সীমান্তে দাড়িয়ে যায় ধ্রুব।
মাথায় বেঁধেছে পেখমের স্যুভেনির।
উড়োজাহাজের পালিয়ে যাওয়া
দেখে নেয় আপন মনে,
পাল্টে যাওয়া আকাশের মেঘের ফাঁকে।
তারপর কাশফুলের শান্ত বনে
ফিরে গিয়ে তুলে নেয়,
বেমানান যুথিকার খুনসুটি।
ফিরে এসে
আমাকে স্বাগত জানায়,
আমার সব আড়ি ভুলে গিয়ে।
আড়ি ভাঙার ঐ মাহেন্দ্রক্ষনে
আমিও সাহস খুঁজে পাই,
নিষেধ ভোলাবার আরো কিছু
পোষ না মানা ছন্দ কুড়াতে।
কোন এক বসন্তে হয়তো
ক্লান্ত গানওয়ালার ফুলশয্যা হবে,
ঐ পোষ না মানা ছন্দের সাজঘরে।
আর আমি ডেকে নেব সেদিন
আমাদের পুরনো পাখিওয়ালাকে।
পাখিদের গান শেখাব বলে।
আমার গান শেখাবার দিনে
ধ্রুবটার কিছুটা ঈর্ষা হবে!
আবারো আড়ি হবে আমাদের,
আড়ি ভাঙার আর এক পশলা
প্রহর গুনে নিতে।
রুমাল
সুরকি ভাঙা পুরনো
দেয়ালের ওপারে লুকিয়ে থাকা,
সুতো খোলা শাওতালী রুমালটা
আমার চুরি গেছে আবারো।
কোন এক বৈশাখের
ঝড় থেমে যাওয়া বিকেলে,
হয়তোবা খুজে পাব তাকে
আমার শান্ত দিঘির জলে।
কথা দিলাম, আমি সেদিন
বৃষ্টির গান বেছে নেব!
অভিধানের মলাট খুলে
খুজে নেব কিছু মনভুলো শব্দ,
চুরি যাওয়া গল্পের চিরকুট সাজাতে ।
বিনোদনশূন্য বানিজ্যিক দৌড়ে
কতবারই তো চুরি গেছে আমার
বিকেলের মাঠ, ভোরের আলসেমি!
পালিয়েছে আমার
লাজুক গায়ের বাকা নদীর জল।
আমি তখন ব্যস্ত হয়েছি
বারেবারে ঐ রুমালখানা খুঁজে নিতে।
ইচ্ছে হত,
ধ্রুবর আকাশ ছোঁয়া ঘুড়ির হাতে
তাকে আলতো করে বেধে দিতে।
শুনেছি , দূরে ভেসে যাওয়া
রুমালে জড়ানো ঘুড়িগুলো নাকি
দুর থেকে চুরি যাওয়া রূপকথার
গল্প শোনাতে ভালবাসে।
ভোর থেকে গোধূলি
স্বপ্ন দেখার মুগ্ধতা আমার
কুয়াশায় ভেজে, দীর্ঘ ঘুমের পরে।
ভোরের নিয়ম মেনে
ভেজা চোখের ঐ মুগ্ধতা পালায়
আমার সোনালী চশমার আড়ালে।
কলিং বেলের শব্দ বাজে।
আমার হাতে ততক্ষণে পৌছে যায়
গতদিনের গল্প লেখা কাগজ।
হাতে থাকে,
রানী এলিজাবেথের কফি।
পুরনো সিডি প্লেয়ারে বাজে
একটা সাত রঙের গান।
শুরু হয় আমার মুগ্ধ চোখে
মুগ্ধ ভোরের সামনে ছোটা।
সাদা মেঘেদের
ভীড় বাড়ে আকাশে।
তিস্তার দু'ধারে জোয়ার ভাটার
খেলা দেখে দলবাঁধা রাজহাঁস।
চৌরাস্তার অগোছালো বাগানে
উকি দেয় বাগানবিলাসী বনসাই।
পাখিওয়ালা বেছে নেয়
ফুটপাথের কোলাহল।
সেলফোনের তড়িৎকোষে
চার্জ দিতে হয় নিয়ম করে।
এসবই আমাদের
প্রতিদিনের ব্যস্ততার গল্প।
ঐ ব্যস্ততায় আমি শুধু,
ঘুম ভাঙা ভোরের
মুগ্ধতাটাকে সাথে রেখে দেই।
তাতে করে গোধূলির বেলায়
নিজের কাছে ফিরে আসাটা,
আমার কিছুটা সহজ হয়।
সাহস হয়,
নিয়ম ভাঙা
ধ্রুবটা ইদানিং বড্ড বেশী
নিয়ম ভাঙার গল্প বলে।
বলে খেলা ভাঙার কথা।
অচেনা গানওয়ালার উত্তরীয় বেধে নেয়,
- ভোরের ভেজা শিশিরে
- বিকেলের কনে দেখায়
- জোনাকি পালানো আঁধারে
- অথবা কোন এক হলুদ সন্ধ্যার
গল্প ভোলা আতশবাজিতে।
শান্তনীল মাধবীলতাও নিয়ম ভাঙে।
প্রথম শ্রাবণের ভেজা দুপুরে,
নীল অপরাজিতার মালা গেঁথে।
লাল-সাদা শাড়ির ভাজে
চোরকাঁটার লুকোচুরিটাও ভুলে থাকে,
প্রবালের বুকে সাদা ঢেউয়ের
ভেঙে যাওয়া দেখে।
নিয়ম ভোলার এইসব বাড়াবাড়িতে
আমিও খুজি তখন নতুন কিছু শব্দ।
"ভাঙল নিয়ম ভাঙছে নিয়ম
জোয়ার ভাটার ভাজে,
শালিক টিয়ে খুলছে খাঁচা
যেমন খুশি সাজে।"
শ্রাবণ
শ্রাবণের শেষ বিকেলে
দরজা খোলা চিলেকোঠার
বাইরে নেমে, দুর থেকে
বাকা রঙধনুর আদিখ্যেতা খুঁজে দেখাটা,
আমার পুরনো অভ্যেস।
পিচভাঙা গলির নিরবতা ভেঙে,
হঠাৎ কোন এক হুডনামা রিকশার
চলে যাবার পথে
পলক ফেলে দেয়াটা,
আমার পুরনো অভ্যেস।
পুরনো সিরামিকে বাধানো
এক পশলা বারান্দার ঈষান কোনে,
বুড়ো টিউলিপ আর
এরোমেটিক যুথিকার
ছোয়াছুয়ি ছুয়ে দেখাটাও,
আমার পুরনো অভ্যেস।
নাম না দেয়া,
ঐ অভ্যেসগুলোর নাম দিয়েছি আমি
"একলা মনের ভালবাসা"।
অনেকদিন হল,
রঙধনুরা ভীড় করে না আকাশে।
হুডনামা রিকশাগুলো হারিয়েছে গোল্লছুটের গতি।
আর ফুলেরা বিদায় নিয়েছে সমুদ্র স্নানে।
জানিস তো ধ্রুব,
ভালবাসাটা একটা অভ্যেস।
কখনো ঐ অভ্যেসটা ভুলে গেলে,
ভীষণ মন খারাপ হয় আমার।
মন খারাপের ব্যাপারটাও খুব অদ্ভুত।
কিছুটা অবুঝ আর কিছুটা অবাধ্য।