Table of Content

Umme Kulsum
NA
NA
1 articles

উম্মে কুলসুমের লেখা

লেখক: উম্মে কুলসুম Category: কবিতা (Poem) Edition: Dhaboman - Eid 2018

 

বন্ধুতা

ব্যর্থতার গ্লানির দীর্ঘ পলিতে
অনেক দু:সহ নির্ঘুম রাত, এক এক টা ভাবলেশহীন দিন ,
নির্জীব প্রাপ্ত বয়স্ক বিকেলের মৃত্যুগন্ধ গায়ে মেখে তোমাকে হঠাৎ আবিষ্কার করেছি...
তোমাকে উপলব্ধি করেছি অসংখ্য অক্ষমতার ভেতর
উচ্ছলতা আর প্রগল্ভতার তরলে কাউকে
পোড়াতে চাইনা আর!
একেক টা কিচ্ছু না করার অলস সন্ধ্যা
একঘেঁয়ে অসংখ্য আকাশখিড়কীর
মেকী উকিঝুঁকি,
অবচেতনে আঁকিবুকি কেটেছে
খামোখা ধ্যান ভাংগার অজুহাতে,
অচেনা স্বাদহীন উপচে পড়া
খাবারের থালায়
ভীষণ পরিতৃপ্তিতে জিহ্বার
গ্রন্হিহীন রসের জবজবে ঢোঁকে
গলার কাঁটার মতো স্মৃতি উপভোগ করেছি,
তবুও
মস্তিষ্কের এক এক টা নিউরনের ভাঁজে , পৌনপুনিক
রক্ত প্রবাহে অক্সিজেনের আরামের মতো
আমাকে সে ক্রমাগত দেয়ালের সাথে
পিন দিয়ে গেঁথেই চলেছ...

 

 

অন্য স্বর

ভরা বর্ষার বানের জলের অবাধ্যতা,
ঘোলা জলে ভেসে যাওয়া ভাগাড়ের
ভাংগা হাড়গোর, পুরোনো শাড়ী,
অজস্র কচুরী পানার জড়াজড়ি,
বেসামাল স্রোতের ঘূর্ণি,অরুচিকর চিরকাল।

ভালোবাসি শীতের নদী, বেলে মাটির চর
শ্রীহীন খাল, পানি নেই তবু জলের ক্ষত অক্ষত।
না জানি নোঙর গেঁথেছিল কত দিশাহীন নাবিক,
ফুটে যাওয়া ফুলের চেয়ে সবুজ বৃন্তে মোড়া কলি
কি ভীষণ আবেদনময়ী!

সফলতার চেয়ে সম্ভাবনা তাই অনেক বেশী দামী।।

 

 

মায়ের জন্য

তোমায় কি আর পারব দিতে অমন একটা
আকাশ খোলা,রৌদ্র ছোঁয়া,সবুজ চুমুর বাড়ী?
পারব দিতে পুঁইয়ের লতা, হাস্নুহানা , শীতলক্ষার ঝিরি?
নয়তো শুধু বৃক্ষলতা, পাখপাখালী, নিমের বাতাস
সুবাসিত তেলের মতো স্মৃতির ঘ্রাণের নির্জনতা,
বিকেল বেলার সর মাখানো চায়ের কাপের বিলাসিতা।
এই শহরে কাক ডাকে সব ভিন্ন স্বরে
মানুষগুলো বেবায় ধরা, গোঙায় শুধু কথা কয় না!
মেকী আর দেখন হাসির সারাবেলা...
একাকী আর নি:সংগতার সম্পর্ক টা
নতুন করে বুঝতে শিখি...
ডিকেন্স আমায় বলেছিল, পিপ না হতে!
তোমার রাজ্যে পূর্ণ তুমি...
চলো সবাই শূণ্যতার এই সংজ্ঞা টাকেই পাল্টে ফেলি।

 

 

অচেনা বর্তমান

অনেক ক্ষন মুখোমুখি বসিবার পর
এমন কি তাকে ছুঁয়ে দেখবারও পর,
সে শুধু স্পর্শ করেছিল ঘ্রাণেন্দ্রিয়
কোন এক আগুনরাঙা জলপাই সবুজ
যাদুর চাবিতে খুলেছিল,
ফেলে আসা শৈশবের স্মৃতির রাজপ্রাসাদ!
ঝাপসা চোখে জলের আল্পনায়
জলরঙের ছবি হয়ে ভেসেছিল
সেই সব বৃষ্টি ভেজা উঠানের নরম তুলতুলে কাদা,
রোদের প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠা
রসবতী কাগুজী আর সুগন্ধি এলাচি লেবুর ঝাড়
সাদা আর ৌগোলাপীর প্রগাঢ় আলিঙ্গন,
ধারাল নখে, আংগুলের ডগায় কুচিকুচি করে কাটা কচি লেবু পাতা -লবন -তেতুল জড়ানো জিভে জল পড়া বিকেল।

মেহেদি পাতার গাছটা তবু তেমনি দাঁড়িয়ে
রোদ-ঝড়-জলের সহবাসে
তিল পড়া কালচে পাতা, নির্যাসে বোঝা যায়
কতটা লাল রং তবু বুকের মাঝখানে।

সেইতো, সেইসব ফেলে আসা অতীতে
কত সহজেই যায় ফেরা, কে যে কবে কেন
বলেছিল স্মৃতি প্রতারক!

মানুষের তবু বর্তমানই বুঝি চিরকাল অচেনা
ফুল নয় পাতা নয় কাঁটা শুধু বেঁধে দেয় সম্পর্কের সীমানা।

 

 

একটি নারী দিবসের কবিতা



সে মারা যাবার পরই
তার সাথে দেখা হয়েছিল,
কথা যদিও অনেক হয়েছে
যোগাযোগ হয়নি কোনো কালে।
তার সকল শীতলতা
একপাশে সরিয়ে রেখে
মানুষ তবু তাকে ব্যবহার করেছে
তাদের বেঁচে থাকাকে উদযাপন করার জন্য!
একটি স্বল্প দৈর্ঘ পায়ের জোরে
কত বার তবু বিচ্ছিন্ন হয়েছে অগুনতি
মানুষের জোড়া জোড়া হাত!
বধির হয়েছে কত করোটির কথামালা
মাছের কানকোরমতো হাত দিয়ে টেনে
ছিঁড়েছে যত হৃদয়ের ধারাপাত
তথাপি
তাল তাল মাংসের চৌকিতে দাঁড়িয়ে
কত বক্তৃতা, শোন হে নারী জাতি
তোমাদের জন্ম স্বার্থক করার
জন্যই আমার যা কিছু প্রণতি !

 

 

 

একটু উষ্ণতার জন্য


মানুষদের মৃতমুখ কি এইরকম হবে---পাতা ঝাড়ু দিয়ে ফেলা পরিপাটি উঠানোর মতো? কামিনী আর নিমবাতাসে তখন একটু রোদ মেখে দিও। বাদ আসর কিংবা জোহরে জানাজা শেষে অন্তিমরোদ পোহাতে দিও কাঠের খাটিয়াকে। আর দোহাই, কবর ভেঙে গেলে মাটি দিয়ে বুজিয়ে দিওনা।
হাঁ-করা গর্তের ভেতর দিয়ে রোদ নেমে যাবে অশরীরী কংকাল শরীরে! আমি এক ক্রান্তিয় মানবী, রোদের ওম কিংবা উত্তাপহীন মৃত্যুও ভাবতে পারিনা! গোটা শহরটাই যেখানে গোরস্তান, লাশেদের সাথেও তখন অবিরাম কথা হয় , কেবল হয় না প্রেম,বন্ধুতা আর যোগাযোগ!

 

 

 

প্রথম দেখা নায়াগ্রা


টরন্টোতে এসেছি প্রায় দেড় বছর! কিন্তু যার প্রেমে পড়ে একদিন কানাডা আসতে চেয়েছিলাম তাকে চোখের চুমু দেবার আকাঙক্ষা টা জীইয়ে রাখছিলাম! অপেক্ষার উত্তাপ প্রাপ্তি তে মলিন না হয় ভয় ছিল মনে।

আয়োজনের অপেক্ষায় ছিলাম... প্রস্তুতি সংক্ষিপ্ত হলেও সুসান্নিধ্য আর এর চেয়ে যথোপযুক্ত উপলক্ষ্য আর হয়না!হোটেলে চেক ইন করে ঢালু পথে নায়াগ্রার কাছাকাছি পৌঁছতেই ভীষণ পরিচিত এক গন্ধ মগজ কে জানান দিল এতো হেমন্তের শিশিরের ঘ্রাণ, যদিও এখানে শরৎ এলো বলে! আবেশে চোখ বুঁজে এলো, গলার কাছে কুন্ডলী পাকাতে থাকল বাষ্পদল!শীতল জলের ছাঁট এসে মুখে লাগল.. সারা শরীরে যাকে বলে বিদ্যুৎ শিহরণ! অহর্নিশ উত্তেজনায় ওয়াও ওয়াও বলছে, আর বলছে সো বিগ মাম্পু! এর বেশী প্রকাশের ভাষা ক্ষমতা তার নাই আপাতত: !

প্রথমে আমেরিকার অংশটা , নানা রকম আলোক প্রক্ষেপণ চলছে...একবার মনে হলো গলে যাওয়া রংধনু আবার মনে হলো আশ্চর্য মেঘদল , আধো আলো অন্ধকারে মনে হলে হঠাৎ বুঝি কোনো যাদুর শহরে চলে এলাম! ঘোর গ্রস্হের মতো হাঁটতে হাটতে চলে এলাম ক্যানাডিয়ান ফল টার কাছে!

 

একবার এক চোখের রঙ এর বর্ণনায় ডিকেন্স লিখেছিলেন আনডিসাইডেড ব্লু , আমার কাছে এই পানিটার রঙ মনে হলো সেরকম ই আনডিসাইডেড গ্রীন! সমুদ্রের ঢেউ এর গর্জন নেই... আছে একটানা ভারী জলবর্ষনের জলদগম্ভীর একটানা শব্দ। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে ক্যামন ধ্যান মগ্নতা ঘিরে ধরে!

 

অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে... বন্ধ হয়ে যাবার ঠিক দুমিনিট আগে আমরা কোনমতে রাতের খাবারের রেস্তরাঁয় ঢুকলাম! নানা সাইজের চিংড়ী, স্যামন, পিৎজা আর বালিশ ব্রেড( নামটা অহর্নিশের দেয়া)! সংগে ছিল আমার প্রিয় পানীয় মোজিত!

পরেরদিন সকালে সূর্যস্নানে নায়াগ্রা ভ্রমণ! টিম হর্টনের কফির উষ্নতাকে সংগী করে সদলবলে রঙীন জামা গায়ে জড়িয়ে চেপে বসলাম জলযানে। পরিষ্কার সূর্যালোক , গভীর নীল জলে ভেসে থাকা সফেদ ফেনা, দুই তীরের চোখ জুড়ানো সবুজ সবকিছুই ছিল ভীষন রকম উপভোগ্য! যতই কাছে যেতে থাকলাম পানির ছাঁট আর শব্দ দুটোই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকল। এক সময় বৃষ্টির মতো পানি পড়তে থাকল, মুখ, চুল, চশমা সব ভিজে একশেষ... সামনে শুধুই ধুমায়িত সাদা! অসম্ভব সুন্দর গুলো ক্যামন ভয় ধরিয়ে দেয়! অহর্নিশ চোখ বন্ধ করে চিৎকার শুরু করল সামওয়ান প্লিজ হেল্প মি! আমি উপলব্ধি করতে চেষ্টা করলাম... অনুভূতিটা অপার্থিব... সৃষ্টির গভীর রহস্যকে কিছুটা হলেও ছঁুয়ে দেখার পূণ্যানুভূতি!

 

নায়াগ্রাকে ছুঁয়ে দেখার আগের আমি আর পরের আমিতে পার্থক্য আছে বৈ কি!

ভ্রমণসংগী দের প্রতি কৃতজ্ঞতা!