শারদীয় মেলা

লেখক: General Category: ভ্রমণ (Travel) Edition: Dhaboman - Fall 2018

শরৎ এলে ওন্টারিওতে প্রচুর মেলা হয় – ছোট বড় মিলিয়ে। সময় এবং সুযোগ পেলে চেষ্টা করি এইসব মেলার অন্তত একটাতে প্রতি বছর যাবার। এই ধরনের মেলাগুলো সাধারণত অনুষ্ঠিত হয় একটু গ্রাম্য পরিবেশে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে। আমার নিজের বাস মহানগর টরণ্টোর বাইরে হলেও, মফস্বল থেকে বেরিয়ে আরোও একটু গ্রাম্য এলাকায় যাবার লোভ আমি কখনই সামলাতে পারি না। বাংলাদেশের গ্রামের প্রতি আমার যে অবারিত টান রয়েছে এখানকার গ্রামে গিয়ে তার সাধ খানিকটা পাবার চেষ্টা করি। ব্যাক্তিগতভাবে চেষ্টা করি বন্ধু বান্ধব সবাইকে নিয়ে যাবার। একা একা আনন্দ করবার মধ্যে আনন্দ কোথায়? সবাই মিলে একটু চমৎকার কিছুকে উপভোগ করার মধ্যে যে তৃপ্ততা আছে তার তুলনা আছে কি?

ভণিতা থাকুক। এবার মেলার প্রসংগে ফিরে যাই।

এবার ইন্টারনেটে গিয়ে খোঁজাখুজি করতে গিয়ে দেখলাম একটি মেলার সাথে দিনক্ষন সব মিলে যাচ্ছে। মহানগরের ভেতরে কিংবা নৈকট্যে থাকার একটা বড় প্বার্শ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সামাজিকভাবে মহা ব্যাস্ততা। আজ দাওয়াত, অমুক দিন জন্মদিন, তমুকদিন বিবাহ বার্ষিকি – উইক এন্ড গুলোতে কিছু না কিছু একটা প্রোগ্রাম লেগেই থাকে। তার ভেতর থেকে সময় বের করাই অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক আগে থেকে সবাইকে বলে কয়ে শারদীয় এই মেলায় যাবার জন্য সময় করে রাখার অনুরোধ করে রেখেছিলাম। সময় এলে দেখা গেল দল বেশ ভারিই হয়েছে। বাচ্চারা কেউ কেউ বেশ বড়, প্রাপ্ত বয়ষ্ক। তাদের কলেজ ইউনিভার্সিটী আছে। প্রায় সময়েই দেখা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে দাবী করেছিলাম তাদের উপস্থিতির জন্য। তারা দয়া প্রবশ হয়ে সবাই যোগদান করল। দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল। এই মাত্র সেদিনও এই প্রাপ্তবয়ষ্করা ছিল গুড়াগাড়া। কেমন করে যেন ঝট করে গা ঝাড়া দিয়ে বড় হয়ে গেল। একই সাথে আমার মাথার কেশের কৃষ্ণতা শুভ্রতার দিকে ধাবিত হয়েছে, কিছু খসে টসে পড়ে খুলির চেকনাই বাড়িয়ে দিয়েছে। মেয়ের সাথে প্রায়ই ঝগড়া করতে হয় সেই চেকনাইকে ‘টাক’ জাতীয় একটা অনভিপ্রেত শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে শুনে।

যাইহোক, কথায় কথা বাড়ে। মেলায় ফেরা যাক।

এবারের গন্তব্য ছিল রকটন ওয়ার্ল্ড ফেয়ার। হ্যামিল্টনের নিকটে রকটন নামে একটা গ্রামে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর ইতিহাস লম্বা। ১৮৫৩ সালের ২০ শে অক্টবরে এই মেলার শুরু। বেভারলি এগ্রিকালচার সোসাইটি এটার আয়োজন করে। ১৮৭৭ সালে প্রথম প্রবেশ মূল্য ধার্য করা হয় (মুল শেডে) ১০ সেন্ট। ১৮৭৮ সালে এলাকার সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে এই মেলাটি স্থানীয় সকল মেলার চেয়ে কলেবরে বড় এবং তার নাম হওয়া উচিৎ ওয়ার্ল্ড ফেয়ার। ১৮৯১ সালে মেলাটিকে একদিন থেকে পরিবর্ধিত করে দুই দিন করা হয়। প্রবেশ মূল্য বেড়ে হয় ২৫ সেন্ট। ১৯৬৯ সালে মেলাটি প্রথম শ্রেণীর মেলা হিসাবে অনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৭১ সালে আবারও পরিবর্ধিত করে মেলা তিন দিনের করা হয়। ইতিমধ্যে প্রচুর উন্নয়ন করা হয় মেলার।  প্রবেশ মূল্য ৭৫ সেন্ট। বর্তমানে মেলাটি বিশাল এলাকা জুড়ে স্থাপিত। এই বছর তাদের ১৬৬তম।

 মেলা তিন দিনের হলেও আমরা যেহেতু বেশ দূর থেকে যাচ্ছি আমাদের পক্ষে একদিনের বেশী যাওয়া সম্ভব নয়। অনেক আলাপ আলোচনা করে আমরা রোববারে (অক্টোবার ৮) যাওয়াই সাব্যস্ত করলাম। সৌভাগ্যবশতঃ সেদিন আবহাওয়া ভালো ছিল। বছরের এই সময়টাতে সাধারণত বেশ বৃষ্টি হয়, হঠাৎ হঠাৎ বেশ ঠান্ডা পড়ে যাওয়াটাও অসম্ভব নয়। ঠান্ডা তবুও চলে কিন্তু বৃষ্টি হলে সব কিছু একেবারে কাদা কাদা হয়ে ওঠে, ঘুরতে ফিরতে অসুবিধা, ভিজে গিয়ে শরীর খারাপ হবার আশংকা তো আছেই। 

প্রায় দুই ঘন্টা লেগে গেল পথে। হাইওয়ে থেকে বেরিয়ে স্থানীয় রাস্তা নিতে হয়, স্পিড লিমিত কম। কিন্তু চারদিকে গাছপালা আর সবুজ এবং শারদীয় রঙের সমাহার, যদিও যতখানি ভেবেছিলাম ততখানি নজরে পড়ল না। এবারে শীত একটু ধীরে আসার ফলে পাতায় রঙের বাহার এখনও তেমন একটা আসে নি। মাঝে মাঝে কিছু গাছে লাল, হলুদ আর কমলার ঝলক নজরে আসছে। অধিকাংশই এখনও সবুজ।

মেলার এলাকায় পৌঁছে দেখলাম এলাহী কান্ড। বিশাল মাঠকে পার্কিং লট বানিয়ে ফেলা হয়েছে, কিন্তু তারপরও গাড়ি রাখার জায়গা নেই বললেই চলে। বেশ কিছু পুলিশের গাড়ী সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে, ভলান্টয়ারদের সহায়তায় সবাইকে যথাযথ ভাবে পার্কিং করতে দিক নির্দেশ করছে। দু একদিন আগে হয়ত বৃষ্টি হয়ে থাকবে। মাঠ ভেজা। কিন্তু পার্কিং করা গেল। মেলা থেকে শ’ খানেক গজ দূরে। হেঁটে মেলার গেটে এলাম। প্রথম গন্তব্য টিকিট কাউন্টার। আমরা একটু দেরীতেই এসেছি। মেলার ভেতরে ইতিমধ্যেই মানুষে গিজ গিজ করছে। টিকিট কাউন্টারে লাইন 

বিশেষ বড় নয়। মাথা পিছু ১৫ ডলার। 

একটি ছবি নাকি সহস্র শব্দের চেয়েও বেশী তথ্যবহুল। সুতরাং এই পর্যায়ে এসে শব্দ থেকে ছবিতে চলে যাওয়া যাক।