টোয়েন্টি থ্রী অ্যান্ড মি

লেখক: রুদাবা আখন্দ Category: প্রবন্ধ (Essay) Edition: Dhaboman - Eid 2019

 

রুদাবা আখন্দ

 

গত পাঁচ ছয় বছর ধরে কানাডার টেলিভিশনে একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন আমাদের মনঃসংযোগ কাড়ছে। বিজ্ঞাপনটি এতই আকর্ষণীয় যে আমাদের ইচ্ছে জাগে পণ্যটি কিনে ফেলার। আর জাগবেই তো, কারণ পণ্যটির নাম হচ্ছে 'টোয়েন্টি থ্রী অ্যান্ড মি'। যা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে  আপনার পূর্বপুরুষের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবার; বলে দিবে তারা কোথায় বাস করত। আর আপনি আপনার আত্মীয়দের খুঁজে পাবেন কোন এক দূর দেশে। তারপর আপনি সেখানে যাবেন তাদের সাথে পরিচিত হতে। কিন্তু, আসলেই কি তা সম্ভব? আমরা আমাদের নিকট আত্মীয়দের ঝক্কিই সামলাতে পারি না। এখন এত অর্থ খরচ করে প্লেনের টিকিট কিনে যাব অজানা দেশে অজানা আত্মীয় খুঁজতে? মানুষের অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সভ্যতার শুরু থেকেই এক শ্রেণীর মানুষ লোক ঠকানোর ব্যবসা করে আসছে। আমাদের বিজ্ঞান এখনও এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়নি যে শুধুমাত্র আপনার মুখের লালার সাহায্যে আপনি এত কিছু জেনে যাবেন। লালা থেকে পাওয়া আপনার DNA তো আপনার কথাই বলবে। আপনার পূর্বপুরুষের কথা কমই বলবে। এটাই তো স্বাভাবিক। জেনেটিকস সম্পর্কে আপনার কিছুটা জ্ঞান থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন বিষয়টি কতটা জটিল এবং আপনার DNA কেমন করে আপনারই কথা বলে।

চলুন ঘুরে আসি ক্রোমোজম, জিন আর DNA-এর মলিকিউলার জগৎ থেকে। সহজ ভাষায় গল্প করে এই জটিল এবং অজানা জগতের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই।       

কেন টোয়েন্টি থ্রী কিংবা তেইশ

মানবদেহের প্রায় সব সেলের নিউক্লিয়াসে তেইশ জোড়া করে ক্রোমোজম আছে। এই ক্রোমোজমের ভিতরে প্রধানত থাকে দুই তন্তু বিশিষ্ট DNA, যার মধ্যে থাকে আমাদের জেনেটিক ইনফরমেশন সমৃদ্ধ জিন আর হিস্টোন নামের প্রোটিন অণু। এর ব্যতিক্রম হচ্ছে লোহিত কণিকা, শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু। লোহিত কণিকাতে কোন নিউক্লিয়াস নেই, তাই ক্রোমোজম এবং DNAও নেই। আর প্রজনন সেল শুক্রাণু আর ডিম্বাণুতে ক্রোমোজমের সংখ্যা থাকে অর্দ্ধেক মানে তেইশ জোড়া না হয়ে থাকে তেইশটি করে। শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মিলনে নতুন মানুষ সৃষ্টি হলে যেন তার ক্রোমোজমের সংখ্যা বেড়ে ছেচল্লিশ জোড়া তারপর বিরানব্বই জোড়া, এভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে অরাজকতার সৃষ্টি না হয় এবং মানুষ মা-বাবার বাচ্চারা যেন অসুর কিংবা অন্য কিছুতে পরিণত না হয়, তাই সৃষ্টিকর্তা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে অতি উন্নত কৌশলে আমাদের জীব প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখেছেন এভাবে।

তেইশ জোড়া ক্রোমোজম

তেইশ জোড়া ক্রোমোজমের প্রথম বাইশ জোড়াকে বলা হয় অটোজম (autosome)। আর শেষ জোড়াটিকে বলা হয় সেক্স ক্রোমোজম (sex chromosome)। প্রত্যেক জোড়ার একটি আসে মা'র কাছ থেকে অপরটি আসে বাবার কাছ থেকে। প্রতি জোড়ার দুটি ক্রোমোজম আকার আকৃতিতে দেখতে একই রকম হয়। শুধু পুরুষ মানবের সেক্স ক্রোমোজম এর ব্যতিক্রম। যদিও নারীর সেক্স ক্রোমোজম দুটো দেখতে একই রকম এবং বেশ লম্বা, পুরুষের সেক্স ক্রোমোজম দুটির একটি দেখতে নারীর গুলোর মতন লম্বা কিন্তু অপরটি বেশ বেঁটে-খাটো। কিন্তু খাটো হলে কি হবে ঐ খাটো ক্রোমোজমই নির্ধারণ করে যে সে পুরুষ। লম্বা সেক্স ক্রোমোজমকে বলা হয় X ক্রোমোজম এবং খাটো সেক্স ক্রোমোজমকে বলা হয় Y ক্রোমোজম। মানুষ প্রজাতির পুরুষকে চিহ্নিত করা হয় 46,XY হিসাবে এবং নারীকে চিহ্নিত করা হয় 46,XX হিসাবে। এখানে 46 বা ছেচল্লিশ দ্বারা তেইশ জোড়া ক্রোমোজমকে বুঝানো হয়।

বাহ্, আপনি এখন আপনার জেনেটিক পরিচয় অথবা ক্যারিওটাইপ ডেজিগনেশন জেনে গেছেন। আপনি হয় 46,XX অথবা 46,XY। এর ব্যতিক্রম হলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। ডাউন সিন্ড্রোমের মানুষদের একুশ (২১) নাম্বার ক্রোমোজমটির দুটি কপির বদলে তিনটি করে কপি থাকে। তাই এই রোগের অপর নাম Trisomy 21। একজন পুরুষ ডাউন সিন্ড্রোম রোগীর ক্যারিওটাইপ হবে 47,XY,+21। এইসব মানুষের মোট ক্রোমোজমের সংখ্যা বেড়ে সাতচল্লিশটি হয়। এমন আরও অনেক অ্যাবনরমালিটি বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে ভ্রূণ বিকাশের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে। এখানে মানুষ অসহায়; তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঘটে এসব।

DNA কি

Deoxyribonucleic Acid বা DNA হচ্ছে একটি জটিল এবং বেশ বড় অণু যা থাকে আমাদের ক্রোমোজমের ভিতরে। এতে থাকে আমাদের সব জেনেটিক ইনফরমেশন বা জিন। আমাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য যেমনঃ ত্বকের রং, চুলের রং, চুল কোঁকড়া না সোজা এমন হাজার হাজার ইনফরমেশন DNA-এর ভিতর থাকে কোড (code) আকারে। DNA নিজে তেমন কোন কাজ করে না। এটা একটা রেসিপি বইয়ের মতন। রেসিপি বই নিজে খাবার তৈরী করে না। অন্য কেউ রেসিপি দেখে খাবার তৈরী করে। আবার একে জীবনের ব্ল-প্রিন্টও বলা হয়ে থাকে।

DNA-এর গঠন

অবৈজ্ঞানিক ভাষায় DNA-এর গঠন বর্ণনা করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। মনে করুন আপনার দু'হাতের তালুর মাঝে আপনি দুহাত লম্বা একটা দড়ির এক মাথাতে পাক দিচ্ছেন আর আপনার সঙ্গী অন্য মাথাটি ধরে রেখেছেন। আপনি পাক দিচ্ছেন দড়িটাকে পোক্ত করার জন্য। অনেকক্ষণ পাক দেয়ার পর আপনি আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে দড়ির অন্য মাথাটি গ্রহণ করলেন। দড়ির মাথা দুটো একসাথে চেপে ধরলে দড়িটি লম্বায় অর্দ্ধেক হয়ে যাবে এবং নিজেই কিছুক্ষণ প্যাঁচ খেতে থাকবে। এখন দড়িটি দুই তন্তু বিশিষ্ট একটি মোটা দড়িতে রূপান্তরিত হবে। DNA-এর গঠনও অনেকটা এরকম। একে বলা হয় DNA Double Helix। দড়িটিকে যদি আপনি আরও কষে পাকাতে থাকেন তাহলে সেটা লম্বায় খাটো হতে থাকবে এবং কুন্ডুলী পাকাতে থাকবে। এখন কল্পনা করুন এই দড়িটিকে আপনি একটি স্বচ্ছ, সরু এবং দুই ইঞ্চি লম্বা প্লাস্টিকের পাইপের মধ্যে কাঠির সাহায্যে গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে বেশ কষ্ট করে ঢুকিয়েছেন আর নিজেই অবাক হচ্ছেন ভেবে কিভাবে এক হাত লম্বা দড়িটা বুড়া আঙুলের সমান লম্বা এবং সরু পাইপটির ভিতর ঢুকলো!

আমাদের DNA গুলো ঠিক এমনি ভাবে ছেচল্লিশটি ক্রোমোজমের ভিতর শক্তভাবে পেঁচিয়ে বসে থাকে। প্যাঁচ খুলে একটা সেলের সবগুলো DNA কে জোড়া দিলে লম্বায় ছ'ফুটের মতন হবে। অথচ ভাবুন একটা সেল এতই ছোট যে তাকে আমরা খালি চোখে দেখতেই পাই না! মাথা গুলিয়ে মত ব্যাপার, তাই না? (নীচের ছবি দেখুন)

কিন্তু বাস্তবিক DNA-এর গঠন এর চেয়েও আরও অনেক জটিল। সব কিছু এখানে বলা সম্ভব নয়। তবে যেটুকু না বললেই নয় তা হচ্ছে কী কী মলিকিউল দিয়ে এই DNA তৈরী। এতক্ষণ দড়ি দিয়ে DNA কে যেভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম এখন তার চেয়ে আরও জটিল করে চিত্রটি কল্পনা করতে হবে। যদি কল্পনায় আগের চিত্রটি না বুঝে থাকেন তবে একটু সময় নিন। তারপর নীচের বর্ণনাটা মনের মাঝে ভাবার চেষ্টা করুন।

 

সেল, ক্রোমোজম এবং DNA

এখন ভাবুন আগের দুই তন্তু বিশিষ্ট দড়িটার প্রত্যেকটি তন্তু আসলে এক একটি চার রঙা পুঁতির মালা। পুঁতিগুলোর রঙ হচ্ছে লাল, নীল, সবুজ আর হলুদ। পুঁতিগুলোর রঙের বিন্যাস কোন নিয়ম মেনে হয়নি। যেমন ইচ্ছে তেমন রঙের পুঁতি একের পর এক গাঁথা আছে। এখন ভাবুন এই দুটো মালা একের সাথে অপরে পেঁচিয়ে জড়িয়ে আছে। আমাদের DNA হচ্ছে এমন হাজার হাজার নিউক্লিওটাইড (Nucleotydes)-এর চেইন বা মালা। চার ধরণের নিউক্লিওটাইড আছে। এগুলো হচ্ছে এ্যাডেনিন (Adenyne), থাইমিন (Thymine), সাইটোসিন (Cytosine) এবং গুয়ানিন (Guanine)। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই এলোমেলো রঙের পুঁতির বিন্যাসের মধ্যেও আপনি অবাক হয়ে দেখবেন যে জড়াজড়ির ব্যাপারে সৃষ্টিকর্তা অদ্ভুত এক শৃঙ্খলা রেখেছেন। একটি মালার লাল পুঁতিটি সব সময়ই জড়িয়ে থাকে অন্য মালাটির হলুদ পুঁতিটিকে। লালের সাথে সব সময় হলুদকে আর নীলের সাথে সব সময় সবুজকে জড়িয়ে থাকতে দেখবেন। কখনই এর ব্যত্যয় হবে না। আমি আপনাদের বোঝাবার সুবিধার জন্য রঙের উদাহরণ টানলাম। বাস্তবে এ্যাডেনিন বা A-এর উল্টোদিকে সব সময় থাইমিন বা T থাকবে। আর সাইটোসিন বা C-এর উল্টোদিকে সব সময় গুয়ানিন বা G থাকবে। আমরা যদি Double Helix DNA-এর প্যাঁচ খুলে দুটো তন্তুকে পাশাপাশি রাখি তাহলে নীচের চিত্রের মত কিছু পাবো -

DNA সিকোয়েন্সিং (DNA sequencing)

আধুনিক বিশ্বে অতি উন্নত এবং বেশ জটিল মেশিন আর কেমিকেলের সাহায্যে আমরা এক খন্ড বা পূর্ণদৈর্ঘ্য  DNA-এর নিউক্লিওটাইডের সিকোয়েন্স বের করতে পারি। যা দেখতে উপরের চিত্রের মতন। '23 and me' প্রধাণত আপনার লালা বা মুখের ভিতরের গাল থেকে ঘষে পাওয়া সেল থেকে DNA সংগ্রহ করে তা সিকোয়েন্সিং করে।

জেনেটিক কোড (Genetic Code)

DNA সিকোয়েন্সিং করে আমরা এই যে A, T, C, G অক্ষরের মালা পাই সেখানে লক্ষ লক্ষ অক্ষর থাকতে পারে। এটার কি অর্থ দাঁড়ায়? বইয়ের মত তো একে পড়া যায় না! বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বের করেছেন যে এই চারটি অক্ষরের যে কোন তিনটি পাশাপাশি বিভিন্নভাবে সাজালে বিভিন্ন এ্যামাইনো এসিডের সংকেত এখান থেকে বের হয়ে আসে। যেমন ধরুন CCT, CCC, CCA, CCG এগুলো চারটি কোড যার প্রত্যেকেই প্রোলিন নামক এ্যামাইনো এসিড সৃষ্টির কাজে লাগে। আগেই বলেছি যে DNA নিজে কিছু তৈরী করে না। এটা শুধু সাংকেতিক ভাষা বা কোড দিয়ে প্রোটিন তৈরীর রেসিপি দেখায়। তাহলে এ্যামাইনো এসিডের কাজ কি? অনেকগুলি এ্যামাইনো এসিড একসাথে জোড়া লেগে সৃষ্টি হয় এক একটি জটিল প্রোটিন অণু। আমাদের দেহের অনেক কিছু প্রোটিন দিয়ে তৈরী। আমাদের সেলের সিংহভাগ পানি আর ২০% প্রোটিন। তাই আমাদের বেঁচে থাকতে হলে অনবরত প্রোটিন খেতে হয়। ইমারত বানাতে যেমন ইট লাগে তেমনি আমাদের শরীরের বিল্ডিং ব্লক বা ইট হচ্ছে প্রোটিন।

কোডোন (Codon): DNA-এর মধ্যে তিনটি করে নিউক্লিওটাইডের গ্রুপ যা এ্যামাইনো এসিডের কোড বহন করে তাকে বলা হয় কোডোন মানে ছোট কোড।

জিন (Gene) কী?

আমরা যদি ভাবি যে আমাদের DNA-তে বিভিন্ন রোগের জিন আছে এবং আমাদের বিভিন্ন ক্রনিক অসুখের (দীর্ঘ সময় ধরে যে অসুস্থতা বিরাজ করে) জন্য আমাদের ঐ সমস্থ জিন দায়ী, যেমন ডায়াবেটিসের জিন, হাই-ব্লাড প্রেসারের জিন ইত্যাদি; তাহলে কিন্তু মস্ত ভুল হবে।

জিন হচ্ছে দীর্ঘ DNA অণুর এক একটি সুনির্দিষ্ট অংশ যাতে থাকে এক একটি প্রোটিন তৈরীর কোড। কোন কোন জিন অনেক বড় (প্রায় শ'খানেক A, T, C, G অক্ষরের মালা) আবার কোন কোন জিন বেশ ছোট (প্রায় অর্ধশত A, T, C, G অক্ষরের মালা)।

প্রোটিন (Protein)

সেলের ভিতর প্রোটিন তৈরীর বিভিন্ন মেশিনারি আছে, যেমন RNA, রাইবোজম (ribosome) প্রভৃতি। তারা DNA থেকে প্রোটিনের কোড কপি করে নিয়ে যায় তারপর প্রোটিন বানায়। প্রোটিনের কিছু উদাহরণ দিচ্ছি

  • আপনার চুল, নখ এবং ত্বকে একটি বিশেষ প্রোটিন আছে। তার নাম হচ্ছে কেরাটিন (keratin), যা আমাদেরকে UV রশ্মি এবং ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে। আপনার কেরাটিন প্রোটিন হয়ত আমারটার থেকে একটু ভিন্ন। কোঁকড়া চুলের কেরাটিনে ডাই-সালফাইড বন্ড নামের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য অনেক বেশী পরিমানে থাকে বলে তার প্রোটিন চেইনও কোঁকড়া।
  • আবার চোখের রঙের জন্য ক্রিস্টালিন নামক প্রোটিন দায়ী এবং কালো চোখ আর নীল চোখের ক্রিস্টালিনও কিছুটা ভিন্ন।
  • আবার রক্তের লোহিত কণিকায় থাকে হিমোগ্লোবিন নামক একটি জটিল প্রোটিন। এই প্রোটিন তৈরীর জন্য বেশ কয়েকটি জিন আছে যারা এই বিশাল প্রোটিনটির বিভিন্ন অংশ তৈরীর কোড বহন করে। কোন কোন মানুষের হিমোগ্লোবিনের জিনের কোডে কিছুটা ভ্রান্তি থাকায় (A, T, C, G sequence) তাদের শরীরে ভ্রান্তিযুক্ত হিমোগ্লোবিন তৈরী হয়। আবার কারো কারো DNA-তে একটি জিন সম্পূর্ণ মুছে যেতে (deleted) পারে। সে কারণে তারা থ্যালাসেমিয়া নামক রক্তের রোগে আক্রান্ত হয়।

এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে অসুখের কোন জিন নেই। কিছু কিছু কোডিং-এ ভুল থাকায় মানুষের শরীর অস্বাভাবিক প্রোটিন উৎপন্ন করে অথবা একেবারেই সেই প্রোটিনটি উৎপন্ন করে না এবং সেটাই রোগের কারণ।

জিন রেগুলেশন (Gene Regulation)

শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মতন প্রজনন সেলগুলো ছাড়া আমাদের শরীরের যে কোন সেল যেমন ত্বক, চুল, লিভার, শ্বেত কণিকা, হাড়, নখ, দাঁত, কিডনি সব ধরণের সেল থেকে ভিন্ন ভাবে DNA সংগ্রহ করে সিকোয়েন্সিং করলে একজন মানুষের জিনের সিকোয়েন্স হুবহু একই হবে। অথচ এই সেলগুলো কিন্তু একেবারেই ভিন্ন রকম। তাদের কাজও ভিন্ন। কখনও ভেবে দেখেছেন কি কেন আমদের লিভারে চুল নেই অথবা আমাদের জিহ্বা কেন আমাদের ত্বক থেকে ভিন্ন? আমরা কেন ত্বক দিয়ে জিনিসের স্বাদ গ্রহণ করতে পারিনা? এদের একের সাথে অন্যের কাজের কোন মিল নেই। কেন এমন হয়?

উত্তরটা হচ্ছে একই জিন বহন করলেও আমাদের বিভিন্ন কলা বা টিস্যুর সেলগুলো সবাই একই ধরণের প্রোটিন বানাচ্ছে না। লিভার সেলে লিভারের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনগুলোই তৈরী হচ্ছে এবং ওখানে কেরাটিন প্রোটিন তৈরী হচ্ছে না যা ত্বক, চুল আর নখের সেলে তৈরী হচ্ছে। আমাদের সেলগুলো শুধু নিজ নিজ টিস্যুর প্রয়োজনীয় প্রোটিনগুলোই তৈরী করে। কারণ ঐ সেলগুলোতে এ সমস্ত প্রোটিনের জিনগুলোই সক্রিয় বা active। অপ্রয়োজনীয় জিনগুলো নিষ্ক্রিয় বা inactive অথবা silenced। একে বলা হয় Tissue Specific Gene Expression। কিন্তু কেন এমন হয়? কে জিনদেরকে বলে ঘুমিয়ে থাকতে অথবা জেগে উঠতে? এর উত্তর বিজ্ঞানীরা এখনও খুঁজছে। পবিত্র কোরানে সুরা আ'লায় মহান সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, 'আমি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছি সূক্ষ্ম পরিমাপে ও সঠিক অনুপাতে এবং প্রত্যেক বস্তুকে তার স্ব স্ব কাজের পথ নির্দেশ দিয়েছি।' (৮৭:২,৩)

(চলবে)