কথার আছে সঠিক বাণী

লেখক: কানিজ ফাতিমা Category: বাস্তব থেকে নেয়া (Anecdote) Edition: Dhaboman - Eid 2019

 

 

 কানিজ ফাতিমা       

 

"কথার আছে সঠিক বাণী, যদি আমি কইতে জানি" --- ছোটবেলা থেকে এটাই শুনে এসেছি । আজ আমি আমার জীবনের গল্প দিয়ে বলব কীভাবে কথাটার মর্ম বিদেশে এসে বুঝেছি ।

 

অল সেটঃ

প্রথম অ্যামেরিকাতে আসলাম ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স এ ভর্তি হয়ে। ইউনিভার্সিটি  কত্রিপক্ষ   সব রকম নিয়ম-কানুন চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে আগেই, কি কি কাগজ-পত্র নিয়ে আসতে হবে, প্রথমদিন কোন অফিসে যেতে হবে, কীভাবে কি করতে হবে একেবারে পরিষ্কার করে লেখা আছে। আমি সেই মোতাবেক ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে যেয়ে প্রথমদিন সকালে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আফায়ারস অফিসে গেলাম আমার প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র নিয়ে। ফ্রন্ট অফিসের মেয়েটা সুন্দর হাঁসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালো । আমার কাগজ-পত্র চাইলো, সব দেখল, পাসপোর্টে একটা ট্যাগ লাগিয়ে দিল এবং বলে দিল ইমারগেন্সি হলে কাকে ফোন করতে হবে বা কোথায় যেতে হবে। মোটকথা সব পরিষ্কার করে  বুঝিয়ে দিয়ে আমার কাগজ-পত্র আমার হাতে দিল, এবং তারপরে বলল "অল সেট"। 

আমি তখন আমার সব কাগজ-পত্র চেক করে  দেখি যে এগুলোতো সেই সেটই, যেগুলো আমি ওকে দিয়েছি, ও আবার কোন সেট চায়?

আমি তখন ওকে আমার সবগুলো কাগজ আবার দেখিয়ে বললাম "yeah, this is the set".

ও তখন আবারও হেঁসে দিয়ে বলল "ইয়া, অল সেট"।

আমি আবার  আমার সব কাগজ-পত্র চেক করলাম, এখন তো আমি বুঝতে পারছি না। আমার কাছে তো আর কোনও সেটও নেই, আমি ওকে কীসের সেট দিব?  

তারপর ওকে জিজ্ঞাসা করলাম "do you need any more thing?"

ও আবারও হেঁসে দিয়ে বলল "Nope. অল সেট"।

তখন আমি দ্বিধা-দন্দে পরে গেলাম যে আমি তো আবারও জিজ্ঞাসা করলাম পরিষ্কার করে, তারমানে ওর আর কোনো কাগজের দরকার নেই, তাহলে কি আমার কাজ শেষ ?

এবার আমি বললাম " am I done?"

ও তখন আবারও হেঁসে দিয়ে বলল "ইয়া, অল সেট"।

এইবার আমি "অল সেট" এর মানে বুঝতে পারলাম। এই সেট বাংলাদেশের কাগজ-পত্রের সেট না, এটা হল অ্যামেরিকার "অল সেট"।

 

প্যাটিস শপঃ

কানাডাতে এসে আমি সরকারী অফিসে কাজ পাই। কাজে যোগদানের প্রায় সপ্তাহ খানেক পরে আমাদের ডিরেক্টরের সাথে আমাদের ইউনিট এর মিটিং। খুব মনোযোগ সহকারে সব শুনছি, নোটবুকে লিখে রাখছি। এক পর্যায়ে একটা গুরুত্তপূর্ণ বিষয় এ ডিরেক্টর বললেন যে "I will go down to Patties shop and get that memo, no worries".

আমি তো চিন্তায় পরে গেলাম, এই গুরুত্তপূর্ণ কাগজ উনি কীভাবে প্যাটিস এর দোকানে পাবেন? তাহলে কি প্যাটিস এর দোকানে ফটোকপি মেশিন আছে বাংলাদেশের মতো? হয়ত কাগজটা ওনার কাছে আছে, ফটোকপি করবে? তখন মনে হল, ও আচ্ছা, মেইন ফ্লোরে একটা দোকান দেখেছিলাম, শিঙ্গাড়া বিক্রি করে, মনে হয় ওখানে যাবে।

নানানরকম চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকল, মিটিং শেষ হল। লাঞ্চের সময় আমি মেইন ফ্লোরের  দোকানটার আশেপাশে ঘুরে দেখার চেষ্টা করলাম, কোনও ফটোকপি মেশিন আছে কিনা, কিছুই দেখলাম না। দোকানটায় সবাই লাইন দিয়ে শিঙ্গাড়া- রোল কিনছে। চিন্তিত অবস্থায় ফেরত এলাম, কাউকে লজ্জায় জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না। এমন একটা অবস্থা, বুঝতেও পারছি না আবার জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না। আর আমার মাথায় ব্যাপারটা ঘুরতেই থাকলো যে, এই গুরুত্তপূর্ণ কাগজ সে কীভাবে প্যাটিস এর দোকানে পাবে?

দুইদিন পর দেখি,  ডিরেক্টর এর ইমেইল এসেছে। সাবজেক্ট লাইন দেখে বুঝতে পারলাম যে সেই memo এর ব্যাপার। খুবই আগ্রহ সহকারে তাড়াতাড়ি খুললাম, memo পড়তে লাগলাম, একেবারে শেষে নাম আর সিগনেচার দেখি "............ Patti"। এতোক্ষণে রহস্য সমাধান হল। ঐ ডিরেক্টর এর নাম হল  "............ Patti" আর উনার অফিস হল ২৩ তলায়, আমাদের ২৫ তলায়।

তাই তো আমার ডিরেক্টর বলেছিলেন যে "I will go down to Patti’s shop and get that memo". এখানে যে কারো অফিস কে শপ বলতে পারে, আমার মাথায়ই আসে নাই!!  উনি বলেছেন "Patti's shop বা office" আর আমি বুঝেছি  "Patties shop" বা  প্যাটিস-এর দোকান । আমি আমার স্বাভাবিক বাংলাদেশের ধারণা অনুযায়ী প্যাটিস-এর দোকান খোঁজাখুঁজি শুরু করেছি!!!