আপনার শিশু ও স্কুল

লেখক: Zafor Abbas Category: প্রবন্ধ (Essay) Edition: Dhaboman - First Edition

নবাগত অভিবাসিদের জন্য কিছু কথা যা অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি। অভিবাসিরা কানাডায় আসবার পর প্রথম সাত দিনের মধ্যে বেশ কিছু কাজ যেমন সোসেল ইনসুরেন্স নম্বর, বাড়ী ভাড়া্,ব্যাঙ্ক একাউণ্ট করা, বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি, হেল্তকার্ড, চাইল্ড বেনিফিট ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং এটাই স্বাভাবিক।

আমি আজ শুধূ স্কুলে ভর্তি ও স্কুল প্রসংগে বলব। এই নতূন দেশে আসবার পরের দিনই বা দুই দিনের মাথায় আপনার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য ব্যাতিব্যস্ত হওয়ার কোন কারন নাই,  দুই চারটা দিন সময় নিন এবং আপনার শিশুটিকেও কিছুটা সময় দিন। হাইস্কুলের  ভর্তির  ব্যাপারটা কিন্তূ সম্পূর্ন আলাদা বিষয়। আমার কথাগুলি বিশেষ করে এলিমেন্টারি স্কুলের শিশু ও অভিভাবকদের জন্য তাই আবার বলছি বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির জন্য তরিঘড়ি করবেন না।

  বাংলাদেশ আর কানাডার মধ্যে দুরত্বের ব্যবধান অনেক, যার ফলে এখানে আসবার পর কদিন পযর্ন্ত  ঘুম নিয়ে সমস্যা হয়, নিয়ম মাফিক ঘুম হয়না, বড়দের মতই বাচ্চাদেরও ঘুমের সমস্যা হয়। অনেক মা বাবাকেই দেখেছি টরেন্টো আসবার পরদিনই বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যান। আপনি যেমন কোন নতুন পরিবেশে গেলে ওখানকার আকাশ বাতাস, বাড়ি ঘর, মানুষজন সব কিছুই বুঝার চেষ্টা করেন, তেমনি আপনার সন্তানও এই নতুন পরিবেশকে বুঝার চেষ্টা করে, তাই  এদেশে আগত নবাগত শিশুটিকে একটি নতূন দেশের  পরিবেশ, খেলার মাঠ,লাইব্রেরি ও স্কুলকে বুঝার জন্য একটু সময় দেওয়া উচিত। একবার স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলে স্কুল ওকে আর দশটা ছাত্র ছাত্রীর মতই দেখবে। আমরা বড়রা যেমন আপনজন ছেড়ে আসার ব্যাথা ভিতরে ভিতরে অনুভব করি কিন্তূ বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততার দরুন নিজেকে ভুলিয়ে রাখি। আপনার শিশুটি ও তেমনি অনুভব করে, তবে প্রকাশ করে না বা আপনার ব্যস্ততা দেখে প্রকাশ করার সুযোগ পায়না এখানকার স্কুলে ভর্তি বিষয়টি, আমাদের দেশের স্কুলের মত এতো কঠিন না। এদেশে স্কুল ভর্তির নিয়ম কানুন বেশ সহজ, বিশেষ করে আমাদের দেশ থেকে আসা অভিভাবকেরা খুব সচেতন, যার ফলে উনাদের জন্য শিশুকে স্কুলে ভর্তি কোন সমস্যার ব্যাপার না। এখানকার স্কুলের পরিবেশও যথেষ্ট বন্ধুসুলভ, শিক্ষক শিক্ষীকারা অতি সহজেই শিশুদের আপন করে নেন, ফলে এ নিয়ে এতো ভাবনার কিছু নাই।

 আপনি যে এলাকায় বাসা নিবেন সেখানকার স্কুলই হবে আপনার সন্তানের হোম স্কুল, এবং স্কুল ওকে খুব সহজেই ভর্তি করে নেবে। সাধারনত স্কুল হাটাপথের মধ্যেই হয়ে থাকে। সম্ভব হলে  ভর্তির আগে একদিন আপনার শিশুকে স্কুলে দেখিয়ে নিয়ে আসতে পারেন, ওকে স্কুল সম্বন্ধে বলেন, শিশুর মধ্যে যেন স্কুলের প্রতি কোন ভীতি না হয় বরং স্কুলে যাওয়ার জন্য আগ্রহ জন্মায় ।

প্রথমতো যে বিষয়ে গুলির উপর  আমাদের নজর রাখতে হবে তাহলো একবার স্কুল আরাম্ভ করার পর শিশুটি তার স্কুলের ব্যাপারে কতটা আগ্রহি এবং স্কুলে ওর কোন অসুবিধা বা সে কোন প্রকার বুলিং কিংবা হয়রানি বা বৈষম্যমূলক আচরনের স্বীকার হচেছ কি না বা আপনার শিশুকে কেহ বুলি করলে বা অপ্রীতিকর কিছু হলে কি করবেন, কি ভাবে স্কুল কর্তিপক্ষকে বিষয়টি জানাবেন, প্রথম থেকেই জেনেনিন। বুলিং কি কত প্রকার তাও জেনেনিন।

দ্বীতিয় বিষয়টি হলো এখানকার স্কুল সিস্টেম বোঝা, সাধারনত আমরা বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করেই নিশ্চিত হয়ে যাই কিন্তু স্কুলের ভর্তির সাথে সাখে স্কুলের নিয়মকানুন, ড্রেস র্কোড, স্কুল কারিকুলাম, বিফোর ও আফটার স্কুল প্রোগ্রম, ফিল্ড ট্রিপ বিষয়গুলি জানা একান্ত প্রয়োজন বা নাহলে পরে অসুবিধা হতে পারে।

 একটি স্কুলে অভিভাবকদের কি কি ভুমিকা থাতে পারে? সেচ্ছাসেবক অর্থাৎ ভলেন্টিয়ার হয়ে স্কুলের কার্যক্রমে প্রতেক্ষ্ ভাবে অংশগ্রহন করা, সেই সাথে স্কুলের অভ্যন্তরিন ব্যাপারে আভিভাবকের অভিমত প্রকাশ করার নিয়মমাফিক পদ্ধতি কি, আরও জানতে হবে পেরেন্ট কাউনসিল কি, আপনি কিভাবে এতে অংশ নিবেন। স্কুল ট্রাষ্টিটি কারা এবং তাদের দায়িত্ব কি? EQAO পরীক্ষার ফলাফলের সাথে স্কুলের শিক্ষা পদ্ধতির সম্পর্ক কি ইত্যাদি বিষয় গুলি শিশুকে ভর্তির অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের জেনে নেওয়া উচিত।

 

আমাদের মনে রাখতে হবে সন্তান গড়ে তুলতে এদেশের স্কুল এবং শিক্ষক শিক্ষীকাদের  ভুমিকা  অনেক বড়। ওন্টারিওর  শিক্ষক শিক্ষীকারা লাইসেণ্স প্রাপ্ত, তাদের সবার কথাবার্তা ধ্যানধারনা একই ধরনের। এলিমেন্টারি স্কুলে লেখাপড়া চর্চা কম বরং এখানে শিশুর  চিন্তা শক্তি ও মানসিক বিকাশের দিকে বেশি জোর দেওয়া হয় এবং সেই সাথে স্কুল ছাত্র/ছাত্রীকে একজন স্বাধীন আত্ববিশাষী কানাডীয়ান হয়ে গড়ে তুলতে সাহায্য করে । কথাগুলি শুন্তে ভালো লাগে তবে আমরা অভিভাবরা যদি এদিকটা প্রথম থেকেই খেয়াল না করি তবে আমরা বুঝবার আগেই আমাদের অলক্ষে শিশুর সাথে অভিভাবকের সামাজিক এবং পরিবেশ জনিতো ব্যবধান তৈরী হতে পারে। নবাগত অভিভাকরা প্রথম থেকেই যদি স্কুলের কর্মসূচি ও নীতিমালা প্রক্রিয়াগুলো জেনেনেন তবে উনাদের জন্যই মঙ্গল।এদেশের স্কুল শিক্ষকদের শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাগত/পুথীগতো জ্ঞান
 দান করাই  মূল লক্ষ নয়। একটি শিশুর মানশিক বিকাশের ছয়/সাতটি ক্ষেত্রের প্রতি নজর রেখে টরেন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড (TDSB)  তাদের শিক্ষার নীতিমালা পরিকল্পনা করে থাকে। যেখানে ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শারীরিক কার্যক্রম খেলাধুলা এবং শিল্পকলা ইত্যাদি বিষয় সমান  ভাবে গুরুত্ত পায়৷ আমরা সাধারনত শিশুর পুথীগত শিক্ষার জন্য ওদের স্কুলে পাঠাই এবং বাকি বিষয় গুলি আমরা আমাদের মতো করে ওদের বুঝাতে চাই ও তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে চাই। এর জন্য আমাদের যা করনিয় অনেক সময় তা না করেও আশা করি আমার শিশু আমার মতোই হবে, আমাদের দেশের পরিপেক্ষিতে তা সম্ভব হলেও এখানে তা কঠিন। নবাগত অভিভাবকরা প্রথম থেকেই এই নতূন দেশের সামাজিক দিকটির উপর নজর রেখে স্কুল ও পরিবারের সহযোগিতা ও সমন্বয়ে সন্তানের একটি সূন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারেন।

টরেন্টোর স্কুল গুলির নিয়ম কানুন সমন্ধে বিস্তারিত জানার জন্য টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের ওয়েব সাই্ট ভিজিট করুন www.tdsb.on.ca