
বরাবরের মতো এবারেও জরুরি ব্যাক্তিগত ব্যাবসায়িক কাজে দশ দিনের জন্য ঢাকা যেতে হলো। এবারের ভ্রমণটা অবশ্য অন্য বছরগুলোর চেয়েও বেশী জরুরি এবং ঘটনা বহুল ছিল। টিকেট কেটেছিলাম একটা ডিসকাউন্ট ট্রাভেল ওয়েবসাইট থেকে, মূলত একটি কারণে – স্বল্প সময়ের ফ্লাইং আওয়ার। টরন্টো থেকে ঢাকা যাওয়ার একটা স্টপ ওভারের চেয়েও কম সময়ে হওয়াতে এই টিকেট কাটা। যাই হোক, নভেম্বর ২০২১ এর এক সন্ধ্যায় এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটে লন্ডন যাত্রার কাউন্টারে রিপোর্ট করতে গিয়ে দেখলাম, এক ঘন্টা ট্রানজিট হলেও করোনা ভাইরাস এর জটিলতায় ব্রিটিশ সরকারের নির্দিষ্ট ওয়েব সাইটে গিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে দরখাস্ত করে অনুমোদন নিয়ে তারপর এয়ার কানাডার বোর্ডিং পাস নিতে হবে। কর্তব্যরত অফিসার কে ওয়েব সাইটের নাম জিজ্ঞেস করলাম অথবা গুগল লিংক আছে কিনা জানতে চাইলাম। আমাকে অবাক করে সেই অফিসার বললো, “এই ব্যাপারে কিছুই করতে পারবো না। তবে আমরা কিন্তু তোমাকে ইমেইল করেছিলাম।”
আমি বললাম, “তেমন কোনো ইমেইল আমি পাইনি। হয়তো জাঙ্ক মেইলে চলে গেছে।”
অফিসার বললো, .ওই যে নীল কোট পরা ভদ্রলোক লাইন এ দাঁড়িয়ে আছে, সে এই ফরম ফিল আপ করেছে। তাকে বলে দেখতে পারো।”
কথা মতো তার কাছে গিয়ে বলতেই ভদ্রলোক সপ্রতিভ হয়ে বললো, “এটা একটু ভিন্ন ধরণের সাইট। তবে আমি গুগলে কি লিখতে হবে বলে দিচ্ছি।”
এদিকে অনেক সময় চলে যাচ্ছে দেখে নার্ভাস হচ্ছিলাম। যাহোক, অবশেষে ফোনে দরখাস্তের অনুমোদন আসলো এবং যথারীতি বোর্ডিং পাস হাতে নিয়ে সময় মতো বিমানে বসলাম। এক সময় বিমানটি রানওয়ের দিকে অগ্রসর হলো এবং আমি প্রফুল্ল চিত্তে জানালা দিয়ে আলো ঝলমল পিয়ারসন বিমান বন্দরটাকে নতুন করে দেখছিলাম। ট্যাক্সি ওয়ে থেকে টেক অফ এর সময় বিমান টি বেশ অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পরেও যখন অগ্রসর হলো না, পূর্ব অভিজ্ঞতার জের ধরে ধারনা করে নিলাম এই বিমান আর উড়বে না। আমার ধারণাই সত্যি হলো। বিমানের ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলো, আমাদের ৭৭৭-৩০০ ই আর শ্রেণীর বিমানটি যদিও মাত্র এক বছরের পুরোনো তারপরেও নিরাপত্তার কারণে এটি নিয়ে আমরা লন্ডন যাচ্ছি না। আরোও বললো, ৭৪ নং গেট এর কাছে এয়ার কানাডার যে বিমানটি দাঁড়িয়ে আছে, আমরা সেটা নিয়েই ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই রওনা হবো। আমি আমার লন্ডনের কানেকটিং ফ্লাইটের - গালফ এয়ার, বাহরাইন গামী – সময় হিসাব করলাম। সাড়ে তিন ঘন্টার স্টপ ওভার থাকায় আমার ফ্লাইট মিস হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
আমরা ফের টার্মিনালে ফেরত আসলাম এবং ৭৪ নং গেটে গিয়ে আবার লাইনে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষন পর মূর্তিমান আতংকের মতো ঘোষণা আসলো লন্ডন গামী এই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন শারীরিক কারণে যেতে পারছে না এবং আমরা নতুন একজন ক্যাপ্টেনের অপেক্ষায় আছি। বিমান ঠিক চার ঘন্টা পর ছাড়বে। আমি চূড়ান্ত হতাশ। আমার কানেকটিং ফ্লাইট মিস করব। কাউন্টারে গিয়ে আমার সমস্যাটা খুলে বলাতে একজন অফিসার বললো, “তুমি নিশ্চিন্তে লন্ডন চলে যাও। আমাদের হিথরো কলিগ তোমার পৌঁছানোর আগেই অন্য এয়ারলাইন্সে বুকিং দিয়ে দিবে।”
আমি তার কথা মতো আরো পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষা করে লন্ডন রওনা হলাম সেই রাতেই ।
হিথরোতে বিমানের বোর্ডিং ব্রিজ দিয়ে বের হতেই এক ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মহিলা আমার নাম ধরে ডেকে আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল। একটু পাশে গিয়ে খাম টা খুলে দেখলাম আমার ফ্লাইট পরদিন অর্থাৎ ১২ ঘন্টা পর, গালফ এয়ারেই। সঙ্গে ১৫ পাউন্ডের একটা রেস্টুরেন্ট ভাউচার। ভদ্রমহিলাকে প্রশ্ন করতে সে বললো, “তোমার এয়ার কানাডার টিকেট, এই বুকিং ওরা টরন্টো থেকেই দিয়েছে বিমানটি ওড়ার পর।”
টরোন্টোর অফিসার আমাকে চরম ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিমানে উঠিয়েছে। এয়ার কানাডার হিথরো কর্মীরা কোনো হোটেল বা এমনকি আমার নিজ খরচেও কোনো থাকার ব্যাবস্থা করলো না। তারা যেটা বললো, “আমরা মূলতঃ একটা থার্ড পার্টির কর্মী আমাদের কিছু করার নেই”। পনেরো পাউন্ডের সাথে আরো পঞ্চাশ পাউনড যোগ করে খাওয়া দাওয়া করে পুরো ১২ ঘন্টা শুয়ে বসে কাটিয়েছিলাম হিথরো বিমান বন্দরে। আরো কষ্টকর ছিল বাহরাইনের অভিজ্ঞতা - সেখানে আরোও ১২ ঘন্টার অপেক্ষার পর ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করতে পেরেছিলাম। বাহরাইন এয়ারপোর্টে হোটেলে কোনো রুম খালি না থাকায় ওরা আমাকে ৪ ঘন্টার জন্য একটা রুম ২২০ ডলারে ভাড়া দিতে চাইলো। অগত্যা আমি লাউঞ্জে শুয়ে বসেই সময় পার করেছিলাম।
ঢাকায় এক সপ্তাহের কাজ সেরে ফিরতি ফ্লাইট ছিল টার্কিশ এয়ারলাইন্সে; ইস্তানবুল থেকে ভিয়েনা; সেখান থেকে টরন্টো– এয়ার কানাডাতে। ঢাকা থেকে প্লেনে আমার পাশের সীটে ঘটনা ক্রমে আমাদের স্কারবোরোর শামীম ভাইকে পাওয়াতে বেশ ভালো লাগলো। তবে সেই ভিয়েনা এয়ার পোর্টের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার দীর্ঘ দিনের বিমান ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকেও হার মানাবে। ইস্তানবুলে আমার ৩ ঘন্টা ট্রানজিট ছিল। কিন্তু ভিয়েনা তে মাত্র ১ ঘন্টার যে ট্রানজিট ছিল। সেটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ইস্তানবুল থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্স ১০ মিনিট দেরীতে ছেড়েছিলো। টার্কিশ এয়ারলাইন্স যখন ভিয়েনাতে ল্যান্ড করলো, জানালা দিয়েই এয়ার কানাডার বিমান টি দেখে আনন্দে মন ভরে গেলো। এক পর্যায় আমাদের বিমানটি টার্মিনালের অনেকটা বাইরে থামলো এবং বাসে করে আমাদের নির্দিষ্ট টার্মিনালে নিয়ে গেলো, যাতে প্রায় পনেরো মিনিট চলে গেলো। আমি অনেকটা অধৈর্য হয়ে লাইন থেকে বেরিয়ে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে গিয়ে বললাম, “আমার ফ্লাইট এর ৪০ মিনিট বাকি আমাকে একটু আগেই ছেড়ে দাও।”
লাইনে অনেক যাত্রী থাকলেও ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে এবং শামীম ভাইকে এন্ট্রি দিলো। কিন্তু সমস্যা হলো এয়ার কানাডার বোর্ডিং কত নম্বর গেট দিয়ে হবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এদিকে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। অগত্যা ভিয়েনা এয়ারপোর্টের এক কর্মীর কাছে জানতে চাইলাম। সে বললো আমাদেরকে এক্সিট ভিয়েনা গেট দিয়ে বের হয়ে জে টার্মিনাল এ ঢুকতে হবে। আমরা অলিম্পিয়ানদের মত জান-প্রাণ বাজী রেখে ছুটলাম। পাশ থেকে আরোও একজন বাংলাদেশী ভাই বললো, “ভাই আমিও এয়ার কানাডার গেট খুঁজছি। চলেন এক সাথে যাই।” ভিয়েনা এয়ারপোর্টের জে টার্মিনালে যেতে হলে দুটো ইমিগ্রেশন এক্সিট এবং এন্ট্রি নিতে হয়। ফলে আরোও দেরী হলো।
জে টার্মিনালের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে দেখলাম অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্সের এক অফিসারও আমাদের তিন জনের পাসপোর্টগুলো হাতে নিয়ে আমাদের সাথে দৌড়াচ্ছে। অবশেষে আমরা এয়ার কানাডার কাউন্টার পৌছালাম। পাশের বিশাল কাঁচের জানালা দিয়ে দেখলাম এয়ার কানাডায় সব বাক্স পোটরা তোলা হচ্ছে। আমাদের পাসপোর্ট গুলো দেখে এবং আমাদের তিন জনের দিকে এক নজর তাকিয়েই এক মহিলা সুপারভাইজার সহ অন্যান্য যারা কাউন্টারে কর্মরত ছিল, সবাই কাজ কর্ম রেখে ভুত দেখার মতো সটান দাঁড়িয়ে গেলো। সুপারভাইজার মহিলা জানাল, ফ্লাইটের দরজা বন্ধ। আর কোনো প্যাসেঞ্জের ওঠানো যাবে না। আমি বললাম, “তোমরা তো এখনো লাগেজ ভরছো। আমাদেরকেও নিয়ে নাও। সোমবার থেকেই কাজ করতে হবে, টরন্টো যাওয়াটা খুবই জরুরি।”
কিন্তু সুপারভাইজর কোনো কথা শুনল না। তার এক কথা, “তোমরা ২৪ বি কাউন্টারে যাও এবং নতুন ফ্লাইট এর বুকিং দাও।”
আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়া মিনহাজ ভাই অনেকটা উঁচু স্বরে অনুরোধ করায় এক পর্যায় বললো, “তোমরা বেশি চেঁচামেচি করলে পুলিশ ডাকবো।”
মিনহাজ ধারনা করল আমাদের তিনজনের গাত্র বর্ণ বাদামী হওয়ায় এই অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্স কোন ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এরা ভিয়েনা এয়ারপোর্টে এয়ার কানাডার গ্রাউন্ড অপারেশনের দায়িত্ব পালন করে। শেষে সন্ত্রাসীর তকমা লাগিয়ে জেলে যেতে হয় কিনা সেই ভয়ে আর বেশি কথা না বলে ২৪ বি কাউন্টারে গেলাম। ওখানেও আরেক সমস্যা। এয়ার কানাডার টিকেট হওয়াতে অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্সের কম্পিউটারে আমাদের টিকেট পরিবর্তন করা সম্ভব না। অগত্যা আমি বললাম, “তোমরা এয়ার কানাডাতে ফোন করো, আমরা একটু কথা বলি।” উত্তর এলো, তাদের কাছে এয়ার কানাডার কোনো নম্বর নাই এবং ফোন করা সম্ভব না। অনেক অনুনয় বিনয় করার পর কাউন্টার থেকে বললো, “আমরা একটা কাজ করতে পারি। পরের দিন সকালে অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্সে ২০০০ ইউরো তে ওয়ান ওয়ে টিকেট কাটার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি।”
আমাদের মাথায় হাত, এখন এতো গুলো টাকা গুনতে হবে !
আমরা অগত্যা ইনফরমেশন ডেস্কে গিয়ে আমাদের সমস্যার কথা একটু আলাপ করি। এয়ার কানাডার বিমানটি তখনও ভিয়েনা ছেড়ে যায় নাই এবং পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে আরোও লাগেজ উঠাচ্ছে। ইনফরমেশন ডেস্ক থেকে বলা হলো, “তোমরা টার্কিশ এয়ারলাইন্স এ ফোন করো কারণ এটা তাদের ফল্ট।”
আমাদের দুজনের লং ডিসটেন্স ফোন ছিল না। শামীম ভাই বললো, “আমার আপেল ফোনটি একদম নতুন এবং ফ্রি লং ডিসটেন্স প্ল্যানে আছি।”
শামীম ভাই গুগলে সার্চ দিয়ে যে নাম্বারে ফোন করলো টার্কিশ এয়ারলাইন্স ভেবে সেটা মূলত ভারতের ব্যাঙ্গালোরের একটা ট্রাভেল এজেন্সী ছিল। প্রায় ঘন্টা খানেক তাদের কথার মারপ্যাচে পড়ে শামীম ভাই তাদেরকে তার ক্রেডিট কার্ড তথ্য এবং কানাডীয়ান পাসপোর্ট ইমেইল করে পাঠিয়ে আমাকে ফোন দিল। আমি আলাপ করে বুঝলাম তারা স্ক্যাম কল কোম্পানির মতো। আমাদের ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পর টিকেট পাঠাবে ইমেইল করে, যেটা আমার মোটেই মনোপুত হলো না।
আমি তাদেরকে সোজা জানিয়ে দিলাম, “আমি অনলাইনে টিকেট কাটলে কয়েক মিনিটেই টিকেট পেয়ে যাই আর তোমরা ছয় ঘন্টা পর টিকেট পাঠাবে! আমি এই ভিয়েনা এয়ারপোর্ট থেকেই দুইশ ডলার বেশি দিয়ে টিকেট কাটবো।”
এর পর আমি ফোন লাইন কেটে দেই। শামীম ভাইকে বললাম, এরা স্ক্যাম কোম্পানি, কোনো মতেই বিশ্বাস করবেন না। যেহেতু শামীম ভাই তার ক্রেডিট কার্ড তথ্য দিয়েছিলো তাই ভিয়েনা থেকেই কানাডার ব্যাংকে ফোন করে তার কার্ড টি বন্ধ করে দিলো। পরে আমরা তিনজনই কানাডার একটা বিশ্বস্থ ওয়েবসাইট থেকে এক হাজার ডলার করে আমস্টারডাম হয়ে “কে এল এম” এয়ারলাইনসের টিকেট কিনে ফেললাম। শামীম ভাই পরে বলেছিলো ঐ স্ক্যাম কোম্পানিটি তার ক্রেডিট কার্ডে চার পাঁচ বার পনেরোশো ডলার উঠানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু আগেই বন্ধ কার্ড বন্ধ করাতে সে রক্ষা পেয়েছিলো।
আমাদের ফ্লাইট ছিল পরদিন রবিবার সকাল দশটায়, ভিয়েনা থেকে আমস্টারডাম হয়ে টরন্টোতে । স্ক্যাম কোম্পানির খপ্পরে পড়ে এবং নতুন টিকেট কাটতে কাটতে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভব করছিলাম। জে টার্মিনালটি বেশ বড়ো হলেও কোনো ফুড কোর্ট দেখলাম না, বরং কিছু স্যান্ডউইচ এবং কফি শপ পেলাম যেগুলোর খাদ্য তালিকার দাম দেখে ভড়কে যাওয়ার মতো অবস্থা ! আমি ছোট সবজির সূপ এবং একটা ডিমের স্যান্ডউইচ নিয়ে কাউন্টার গেলাম, বিক্রয় কর্মী দাম ধরলো বাইশ ইউরো অর্থাৎ কানাডিয়ান ডলার প্রায় পঞ্চাশের মতো। এরপর ভেন্ডিং মেশিন থেকে পানি কিনতে গিয়ে ছোট একটা বোতল কিনলাম সাড়ে চার ইউরো দিয়ে। ভিয়েনা তে প্যান্ডেমিকের লক ডাউন থাকায় দাম বেড়ে গেছে, জনৈক এয়ারপোর্ট কর্মী জানাল। সুপেয় পানির ডিস্পেন্সার গুলো বন্ধ থাকায় আমি সর্ব সাকুল্লে তিন বোতল পানি কিনে পান করলাম। পরদিন সকাল পর্যন্ত আর পানি পান না করার পন করলাম । রাত বারোটার পর ভিয়েনা এয়ারপোর্টটি এবং ভেতরের দোকান পাট সব বন্ধ হয়ে গেলো লক ডাউনের কারণে। সকাল ছয়টায় আবার খুলবে। ব্যাস্ত এয়ারপোর্ট টি অনেকটা ভুতপুরীর রূপ নিলো। আর কোনো বিমান ওঠা-নামাও করছে না।
আমরা টার্মিনালের শেষ প্রান্তে নরম গদি যুক্ত কিম্ভূতকিমাকার বিছানা সদৃশ জায়গায় শোবার চেষ্টা করলাম কিন্তু কোনো মতেই ঘুমাতে পারলাম না। এভাবেই রাত পার করে সকাল সাতটায় আবার নির্ধারিত কাউন্টারে গিয়ে “কে এল এম” এর চেক ইন কাউন্টার নিশ্চিত হয়ে বসলাম। গত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই আজ তিন ঘন্টা আগেই চলে এলাম। সময় মতো প্লেনে উঠে আমস্টারডামে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই চলে আসি আমরা। সেখানে আমার করোনা টেস্ট সার্টিফিকেটটি কয়েক ঘন্টা বৈধ থাকলেও শামীম ভাইয়ের ৭২ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়াতে ভারতীয় অফিসারটির দয়ায় টরোন্টোর ফ্লাইটে উঠতে পেরেছিলো । আমাদের লাগেজে গুলো ভিয়েনা তে পড়ে থাকলেও কোনো অসুবিধা ছিল না। আমাদেরকে অন্ততঃ রিফুজি হয়ে ভিয়েনায় থাকতে হয়নি।
মোরাল অফ দা স্টোরি : কখনো এক ঘন্টার ট্রানজিটে এয়ার টিকেট না কাটা এবং টিকেটের সাথে ভ্রমণ আইটিনারি পরিবর্তন যোগ্য ইন্সুরেন্স ক্রয় করা।