'আপনাঘর' থেকে আপন ঘর

Writer: Khairul Anam Category: ছোট গল্প (Short Story) Edition: Dhaboman - Eid 2022

 

শিকাগোর নারীসেবামুলক একটি প্রতিষ্ঠান, “আপনাঘর”-এর পঁচিশতম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। উদযাপনে প্রধান অতিথি হিসেবে যিনি ‘দেশ’ থেকে আসছেন, তিনি পৃথিবীর প্রায় সবার কাছে সুপরিচিত, গরীবের সেবায় নিয়োজিত প্রাণ, নোবেল বিজয়ী।  এ ধরণের  “ফান্ড রেইজিং ডিনার”-এ, সাধারণত দু’ধরণের মানুষ জমায়েত হয়। একদল আসেন দান করার পূণ্যের চেয়ে নিজেকে জাহির করার জন্য। তার নাম ও দানের পরিমাণটা মাইকে হলের সবার সামনে যাতে ঠিকমতো উচ্চারিত হয়, তিনি সেই তালে থাকেন। আর এক গ্রুপ আসে এটাকে অলিখিত বিজনেস মিটিং হিসেবে কাজে লাগাতে। যাদের সঙ্গে সচরাচর দেখা করার সুযোগ মেলে না, তাদের পাশে বসে গল্প করতে করতে ডিনার করা যায়। অবশ্য এভাবে খোঁটা দিলেও আমি নিজে সমেত কেই বা ফেরেস্তা?   

“আপনাঘর” প্রতিষ্ঠানটির এই টার্মের সভাপতি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুমানুষ। অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে বিকেল পাঁচটায়, শিকাগোর ডাউনটাউন        “হিল্টন এন্ড টাওয়ার”-এ। গাড়ীটা ভ্যালে পার্কিং-এ দিয়ে উপরে এসেছি। পার্কিং রেটটা মোটেও আকর্ষণীয় নয়। টিপস টুপ্‌স মিলিয়ে ৪৫ ডলার। সঙ্গে বড় মেয়েটাও এসেছে। কারণ তার স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির অনেক বন্ধু আজ এখানে থাকবে।

আমাদের টিকিট নেওয়ার সময় তারা আমাদেরকে পাশের হলঘরে “সোশ্যাল আওয়ারে” যোগ দিতে বলল। বিশাল লাইনে অনেকক্ষণ দাঁড়ানোর পর সার্ভারের কাছে আসতে যখন জিজ্ঞেস করল, কোন ড্রিংকটা চাই, বললাম, “যে কোন একটা সফট ডিংক”। তখন সে বলল, “পরের লাইন”। পরের লাইনে আবার ৪৫ মিনিট দাঁড়াবার পর যখন সার্ভারের কাছে এসেছি, তখন সে বলল, “ফাইভ ডলারস”। মোট পনের ডলারে আমাদের তিন জনের জন্য যতটুকু কোক জুটলো, সেটার পরিমাণ ছোট একটা কোকের ক্যানের অর্ধেকের বেশি হবে না।  

এর মধ্যে একটা বিরক্তিকর ঘটনা ঘটে যাচ্ছিল। প্রথমে পাত্তাই দিই নি। কথা নেই বার্তা নেই এক ব্যাটা কোত্থেকে এসে লাইনে না দাঁড়িয়ে আমাদের পাশে পাশে এগুতে থাকছিল। আমরা ড্রিংক-এর জন্য আলাদা টিকিট কিনলাম, সে কিন্তু কিনল না। তারপর কোকের গ্লাস হাতে নিয়ে আমরা যখন মেইন অডিটরিয়ামে ঢুকতে যাচ্ছি, দেখি সেও পেছন পেছন আসছে। আমরা আমাদের নির্ধারিত ৩ নম্বর টেবিলে গিয়ে বসলাম। তবে লোকটাকে আর দেখা গেল না। আহা, কি স্বস্তি! ভাবলাম যাক বাবা, বাঁচা গেল। কিসের কি? হঠাৎ দেখি সে আমাদের পাশের টেবিলে বসে আছে। আহারে জ্বালা!

সভা শুরু হলো। মাস্টার অফ সেরিমনি মিঃ রবি বাইচওয়াল এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, তাদের বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স, কর্মপ্রণালী ও প্রধান অতিথি সম্বন্ধে অনেক জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিলেন। কি পদবী রে বাবা ! আগরওয়াল, ঝুনঝুনওয়াল, কিংখাবওয়াল, এমন কি পাঁউওয়ালও শুনেছি। কিন্তু বাইচওয়াল? আমার মুখ্যুমি মাফ করে দিও ভগবান, যিশু, পরওয়ার দেগার।

যাদের জন্য এসেছি তাদের কথা একটু বলি। সত্তর দশকের প্রথম দিকে তিনজন ভারতীয় ভদ্রমহিলা, দেশি স্বামীদের দ্বারা নির্য্যাতিত অসহায় মহিলাদের ও দিশেহারা নতুন ইমিগ্র্যান্টদের দুরবস্থা দেখেশুনে এর একটা বিহিত করার কথা চিন্তা করেন। “ক্লাব অফ ইন্ডিয়ান উইমেন” ও “ইন্দো ক্রাইসিস লাইন” নামে দু’টি প্রতিষ্ঠানের উত্তরসুরি হিসেবে ১৯৭২ সালে শিকাগোতে এই “আপনাঘর” প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যবস্থাপনার দায়ীত্বে থাকা সবাই বেশ মুক্ত-মনা। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্য্যন্ত ১৩ জন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ১১ জনই মহিলা, বাকি ২ জন পুরুষ। এদের মধ্যে হিন্দু, শিখ এবং মুসলমান তিন ধর্মেরই লোক আছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমার এই বন্ধু এবং আজকের প্রধান অতিথি, দুজনেই  বাংলাদেশি। আর এর সাহায্য যারা নেয়, তাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী প্রায় সমান সমান। আসল কথায় আসি।

এতক্ষণ ধরে বিরক্তিকর সেই লোকটা পাশের টেবিল থেকে সারাক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়েই ছিল। ডিনারের শেষ আইটেম, মিষ্টি ও চা শেষ করে আমরা রওনা দেবার জন্য উঠে পড়লাম। দেখি, লোকটিও উঠে পড়ল। আমরা দোতালা থেকে সিড়ি দিয়ে যখন নামতে যাচ্ছি, হঠাৎ লোকটা একেবারে সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়ল। আগে থেকেই তার প্রতি বিরক্ত ছিলাম। তার উপর এখন পথ আটকিয়েছে। তবুও ভদ্রতা করে বললাম, “মে আই হেল্প ইউ”? লোকটা কিছুটা হাত কচলিয়ে বলল, “পার্ডন মি। আমি তখন থেকে অবাক হয়ে ভাবছিলাম, ও এখানে এল কি করে? ও, মানে আমার ছোট ভাই। বিশ্বাস করুন, তার এবং আপনার, একেবারে একই চেহারা। দাঁড়ানোর ভঙ্গি, হাত নেড়ে কথা বলা, হাসি, গায়ের রং, হেয়ার স্টাইল - হুবহু এক। ওয়ান হান্ড্রেড পার্সেন্ট। তার ছবি ওয়ালেটে থাকলে আপনাকে দেখাতে পারতাম। ওটা আমার সেলফোনে সেভ করা আছে। আনফরচুনেটলি, আমার সেল ফোনটা ভুলে গাড়ীতে ফেলে এসেছি। গাড়ীটা এখন আবার ভ্যালে পার্কিংএ। তাই আপনাকে আর............।”

কথাটা শুনে আমি রীতিমত লজ্জায় পড়ে গেলাম। কিছুটা মেক আপ করার আশায় বললাম, “স্যরি টু হিয়ার দ্যাট। অবশ্য শুনে বেশ খুশি লাগছে যে, আমার সঙ্গে আপনার ভাইয়ের কিছুটা সাদৃশ্য আছে। আর আমাকে দেখে আপনার ভাইয়ের কথা মনে পড়েছে জেনে আরও ভাল লাগছে”। উনি বললেন, “না না, জাস্ট সাদৃশ্য না। বললাম না, একদম ওয়ান হান্ড্রেড পার্সেন্ট?” এরপর শুরু হলো আমার প্রশ্নের ফোয়ারা, “আপনার নাম কি, কি করেন, কোথায় থাকেন, হ্যানা ত্যানা”। উনি বললেন, “আমার নাম সুনীল আগরওয়াল, পেশায় অর্থোপিডিক সার্জেন। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি হসপিটালের ফ্যাকাল্টিতে ...... ।” কথা কেড়ে নিয়ে বললাম, “আমার জামাই ও আছে নর্থওয়েস্টার্নের ফ্যাকাল্টিতে”। উনি বললেন, “আমি অবশ্য ২১ বছর ওখানে প্রফেসারি করে এখন অর্‌ল্যান্ড পার্কে নিজের প্র্যাকটিসে আছি। ওখানেই থাকি। আমাদের দেশের বাড়ি ইন্ডিয়ার জয়পুর”। নিজের নামটা শুনিয়ে বিজনেস কার্ড বিনিময় করার সময় বলি, “আমি অবিশ্যি বাংলাদেশি, থাকি নেপারভিলে। জয়পুর আমার খুব পচ্ছন্দের জায়গা। ফেমিলি নিয়ে বেড়াতে গিয়ে অনেক এনজয় করেছি। ওখানকার ‘অম্বর প্যালেস, হাওয়ামহল, যন্তর মন্তর, সিটি প্যালেস, লস্যিওয়ালা এলাকায় গিয়ে মাটির গেলাসে খাওয়া লস্যির স্বাদ এখনও জিভে লেগে আছে। আলাপ হয়ে অনেক খুশি হলাম। আবার দেখা হবে, বায় বায়”।

একসপ্তাহ পরে মেল বক্সে অন্যান্য মেলের মধ্যে অপরিচিত জায়গা থেকে আসা একটা খাম পাওয়া গেল। এসেছে ঐ ডাঃ আগরওয়ালের কাছ থেকে। খামের ভেতরে একটা চিঠি, নগদ একশ ডলার ও ফ্লোরিডা যাবার জন্য একটা প্লেন টিকিট। চিঠিতে লেখা, “মাকে ফোনে আপনার গল্পটা বলার পর মা আপনাকে দেখার জন্য একেবারে অস্থির হয়ে উঠেছেন। জানি আপনি খুবই ব্যস্ত। তবে কাইন্ডলি তার মধ্য থেকে যদি একটু সময় বের করে নীচের ঠিকানায় গিয়ে মা’কে একবার দেখা দিয়ে আসতে পারেন, তাহলে আপনার কাছে আমরা পুরো ফেমিলি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। এই সঙ্গে একটা ওপেন রিটার্ন টিকেট ও ট্যাক্সি ভাড়া পাঠালাম। ভগবান আপনার মঙ্গল করুন”।

হঠাৎ অপ্রত্যাশিত এ ধরণের একটা চিঠি পেয়ে আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। চেহারার সাদৃশ্য আছে বলে, অন্য একটা স্টেটে উড়ে গিয়ে নিজের চেহারা ওনার মা’কে দেখিয়ে আসতে হবে? যদিও এটা তাঁর করুণ মিনতি, কিন্তু এটা কি ধরণের আবদার? লোকটা তো বেশ শিক্ষিত। তাহলে এরকম হ্যাংলামি করার মানে কি? ভদ্রলোকের মাথার ঠিক আছে তো ? অবশ্য পরের মাসে ফ্লোরিডাতে আমার একটা বিজনেস মিটিং ছিল। সেটা জানিয়ে দিয়ে ওনার টিকিট ও টাকাটা ফেরত পাঠিয়েছিলাম। ওগুলো ব্যবহার করার আর দরকার হয়নি।

পরের মাসে ফ্লোরিডায় মিটিং শেষে, চিঠিতে পাঠানো ঠিকানা অনুযায়ী ওনার ভায়ের বাড়ীতে ওনাদের মা’য়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। দিনের বেলা হলেও বাইরে থেকে বাড়ীটা কেমন যেন নিস্তব্ধ মনে হলো। কলিং বেল পেয়ে দরজা খুলে দেওয়ার পর ভেতরে ঢুকে দেখা গেল সেই একই অবস্থা। কেমন একটা নিশুতি ভাব। দরজা খুলে দিয়েছে ১২-১৩ বছরের একটা ফুটফুটে বাচ্ছা। আমার ছোট মেয়ের বয়সী হবে। চেহারাতেও কেমন যেন কিছুটা মিল আছে। দরজা খুলে দিয়েই এক দৌড়ে সে ভেতরের রুমে চলে গেল। লিভিং রুমের সোফায় বসে অদেখা এই মাসীমার জন্য অপেক্ষা করছি। ভেতরের ঘরের জানলার পর্দা ফাঁক করে সেই সুন্দরী কিশোরী এক ঝলক এদিকে তাকাচ্ছে আর পর্দা বন্ধ করে দিচ্ছে। বাইরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে জানালার পর্দার দিকে তাকিয়ে ঐ মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করছি। এমন সময় পেছন দিক থেকে চমকে দেবার মতো আসলো একটা শব্দ, “আপনার চা”। হুবহু তনিমার গলা। এটা কি করে সম্ভব? সে এখানে আসলো কেমন করে? শুধু এখানেই তো নয়, আবার ফিরে এই পৃথিবীতে?

পেছন ফিরে দেখি পরিষ্কার বাঙালী বধুর মত দেখতে, শাড়ী পরা সুশ্রী, শান্ত, এক ভদ্রমহিলা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে বললেন, “আমি সুনন্দা, মিসেস আগরওয়াল”। বেশ কিছুটা অবাক হয়ে বলি, “নমস্কার মিসেস আগরওয়াল, আপনি এত ভাল করে বাংলা বললেন। শিখলেন কোথায়?” উনি হেসে বললেন, “আমার বাবারা তিন পুরুষ ধরে জয়পুরের প্রবাসী বাঙ্গালী। তাঁদের পূর্বপুরুষরা নাকি পুর্ববঙ্গের ময়মনসিংহ থেকে প্রথমে কলকাতায় এসেছিলেন। সেখান থেকে প্রথমে চাকুরী ও পরে ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ে জয়পুরেই থিতু হোন। বাবার বাড়ীতে এখনও বাংলায় কথা হয়”। হেসে বললাম, “ইন্টারেস্টিং তো, চমৎকার। তা কেমন আছেন? আপনার শাশুড়ী মাতা তো আসলেন না”।

উনি বললেন, “মা আপনাকে পর্দার আড়াল থেকে দেখে খুব ইমোশানাল হয়ে পড়েছেন। ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগছে। অল্পক্ষণ পরেই এসে পড়বেন। আমাদের পিচ্ছিটাও তো আপনাকে দেখে বেশ চমকে গেছে। ওর অভ্যাস মতো দৌড়ে আপনার কোলে এসে বসে পড়ার খুব ইচ্ছা। ও আবার খুব লাজুক তো। তাই খুব ইচ্ছা থাকলেও লজ্জায় সামনে আসতে পারছে না”। আমি একটু মস্করা করে জিজ্ঞেস করি, “আর আপনার রিয়্যাকশান কি? তাছাড়া মিস্টার বা ডক্টর আগরওয়ালকেও তো দেখছি না। উনি কি এখন বাইরে? মানে অফিসে, না ক্লিনিকে, নাকি আউট অফ টাউন?”

কথাটা শুনে মিসেস আগরওয়াল হঠাৎ যেন একটু কেঁপে উঠলেন। তারপর একেবারে নিথর হয়ে গেলেন। মিনিট দেড়েকের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে খুব নিচু গলায়, থেমে থেমে বললেন, “ওনাকে দেখতে পাওয়ার আর কোন উপায় নেই। দু’মাস আগে ক্লিনিক থেকে ফেরার পথে এক ট্রাকের সঙ্গে ওর গাড়ীর সামনা সামনি ধাক্কায় ......। আরো এক মিনিট থেমে বললেন, “অ্যাক্সিডেন্টটা আমাদের একেবারে সব কিছু নিয়ে গেছে”।

হঠাৎ কথাটা শুনে আমার দু’চোখের পানিও টসটস করে পড়তে শুরু করেছে। গভীর সহানুভুতির স্বরে একান্ত আন্তরিক হয়ে বলি, “খুবই স্যরি ম্যাডাম। আমি চিন্তাও করতে পারিনি এসে হঠাৎ এমন একটা মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে ......, ইস্‌স......। কি যে বলি, আর কিই বা করি? বাস্তবিকই দুঃখ আর সমবেদনা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি”। ভদ্রমহিলা মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়েই থাকলেন। একটুক্ষণ চুপ থেকে নিচু স্বরে আমিই আবার জিজ্ঞেস করি, “এখন কি করে কাটছে আপনার দিন কাল? শাশুড়ি, সংসার, বাচ্চা, সবকিছু একা কি ভাবে সামলাচ্ছেন?” মিসেস আগরওয়াল কিছু বলার জন্য একবার মুখটা খোলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাঁর কথা গলায় আটকে গেল।

আমাকে যেন কথায় পেয়ে বসেছে। আবার জিজ্ঞেস করি, “বিশেষ করে বাচ্চাটাকে কি বলে সান্ত্বনা ......”। এতক্ষণ উনি নিজেকে সামলে নিয়ে ছিলেন। কিন্তু বাচ্চার কথা শুনে আমার কথা শেষ হবার আগেই ঝড়ের বেগে দুনিয়ার যত কান্না এলো তাঁর চোখ মুখে। আর্তনাদ করে কান্নায় ফেটে পড়ার আগে নিজেকে সামলে, আঁচলে চোখ মুখ চেপে তিনি খুব তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। হতচকিত আমি জড় পদার্থ হয়ে সেভাবেই বসে থাকলাম। একটু পরে ওনার শাশুড়ি আসবেন। সেই দৃশ্যপটটি কেমন হবে, সেই পরিস্থিতি আমি কি ভাবে সামাল দেব, দিশেহারা আমি উপরওয়ালার কাছে সেই প্রার্থনাই করতে থাকি।