Table of Content

Kazi Ahmad Pervez
NA
NA
2 articles

ঝুমানার জীবনযাপন

লেখক: কাজী আহমদ পারভেজ Category: ছোট গল্প (Short Story) Edition: Dhaboman - Eid 2017

 

 

ঝুমানাকে আমি জানি ২৫ বছর ধরে। সুমনের সাথে ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল। একসময় ওদের টোনাটুনির সংসারে বহুবার আতিথ্য পেয়েছি।কিন্তু পাঁচ বছর যেতে না যেতেই জানলাম, সন্তান আসছে না বলে সুমন ঝুমানাকে ছেড়ে চলে গেছে। হ্যাঁ, সুমন ঝুমানাকে ছেড়ে গেছে, তাড়াতে পারে নাই কারন বাসাটা ঝুমানার ছিল। ঐটুকু না হলে হয়তো তাড়িয়েই দিতো। পরে অবশ্য জেনেছিলাম, সুমন ছেড়ে যায় নাই। অবিশ্বস্ততার কারনে ঝুমানাই সুমনকে তাড়িয়ে দিয়েছিল।

ঝুমানার এই যে একা হয়ে পড়া, স্বামীর অবিশ্বস্ততা, সন্তান না থাকা - এসব নিয়ে কিন্তু তাঁর ক্লোজ সার্কেলের কেউ বিব্রত হয় নাই। খুব বেশী হলে সামান্য করুনা বোধ করেছে। আর ভেবেছে, "ঝুমানারই নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে। নইলে স্বামী তাঁকে ছেড়ে যাবে কেন?"

ঝুমানার সিঙ্গেল জীবনটা কেবলই এগিয়ে যাবার।পারিবারিক ব্যবসায় মননিবেশ করে সে। আর তাঁর ফাঁকে ফাঁকে একাকী সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটে তাঁর। এক দুই বছর না, আঠারোটা বছর এইভাবে কেটে যায় তাঁর এই আঠারো বছরে দু'চারবার তাঁর যে কারো কারো সাথে রোমান্টিক সম্পর্ক হয় নাই, তা না কিন্তু নানা কারনে সেগুলো আর বেশিদূর গড়ায় নাই। কেন গড়ায় নাই, তা অবশ্য ভিন্ন গল্প। সেটা তোলা থাক ভবিষ্যতের জন্য।

দেড় যুগ ধরে এই যে ঝুমানার একা একা পথ চলা, এটাও কিন্তু তাঁর ক্লোজ সার্কেলে থাকা মানুষ গুলোকে বিব্রত করে নাই। তবে তাঁরা করুনা বোধ করেছে। আর নিজেদের তুলনায় ঝুমানাকে অসুখি জ্ঞান করে মনে মনে আত্মপ্রসাদ নিয়েছে।

মধ্য চল্লিশে পৌছুনোর পর সম্প্রতি ঝুমানার অনলাইনে পরিচয় হয় রাজিবের সাথে। রাজীব সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় উত্তির্ন। ঝুমানার সাথে বয়সের পার্থক্য কুড়ির অধিক। ঝুমানার কোনো কোনো বান্ধবির সন্তান রাজিবের সমবয়সি, সহপাঠিও হতে পারে। অনেকদিন ধরে রাজিবের সাথে যোগাযোগে থেকে একসময় ঝুমানা রাজীবের প্রেমে পড়ে। রাজিবও। কিছুদিন আগে জানলাম, তাঁরা বিয়ে করেছে। সুখে শান্তিতেই দিন কাটাচ্ছে।

এইবার আর তাঁর ক্লোজ সার্কেল ঝুমানাকে করুনা করার কোনো সুযোগ পায় না। তাঁরা বিব্রত হয়। এমনই বিব্রত হয় যে সে কথা তাঁরা মাইক লাগিয়ে একে অন্যের সাথে শেয়ার করা শুরু করে।
- জানিস, ঝুমানাটা কি করেছে? ছেলের বয়সি একটাকে বিয়ে করেছে।
- ছি ছি ছি আজকাল স্বামীর কাছে মুখ দেখাতে পারি না। মিটি মিটি হাসে আর বলে, "কি ঠিক করলা? বন্ধুর পথ ধরবা? এত ক্লোজ ফ্রেন্ড যখন, করতেও পারো তা..."
- ছোকরা শিওর যাদু-টোনা করেছে। নইলে এই বয়সে কারো এমন ভিমরতি ধরে কারো?
- এখন তো আর বেবীও হবে না। এই ছেলেকে ধরে রাখবে কি দিয়ে? থাকবে? খালি খালি...
- ছোকরা চাল্লু আছে। ঝুমানার টাকা পয়সা মেরে দেবার ধান্দা। ঐটা ছাড়া আর কি আছে ওর যা দিয়ে এই ছেলে কে বেধে রাখবে? এই বয়সে কে কি পারে, জানি না বুঝি?
- ইত্যাদি ইত্যাদি...

এয়ার পোর্টে হঠাৎ ঝুমানার সাথে দেখা। জানতে চাইলাম, "কি ভাবছো, ওদের কনসার্নগুলো নিয়ে?"
"এতগুলো বছর ধরে এত বড় একটা ব্যবসা চালাচ্ছি, আর নিজের ভাল মন্দ বুঝবো না? রাজীবের মধ্যে ভালবাসা কি আছে তা নিয়ে ভাবি না, কিন্তু আমার জন্য কেয়ারের যে কোনো অভাব নাই সেটা বুঝি বলেই সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিলাম। আমাদের বয়স জনিত যে লিমিটেশন, সেটা তো আছেই। এটাতো আর নিরাময় যোগ্য না। আর আমি রাজিবকে বলেই রেখেছি, কখনো বোর হলে আমাকে জানাতে। শান্তিপুর্ন ভাবেই সেটার সমাধান করে দেবো। আমি জানি, এখন থেকে পাঁচ, দশ বা পনেরো বছর পর তাঁর সেই বোরডম আসতেই পারে। এলে যখন তাঁর সসম্মানে সমাধান হবে, কেন সে তাহলে চিটিং করে বেড়াবে? আমিই বরং এই পাঁচ, দশ বা পনেরোটা বছর আনন্দে কাটাই তাকে সাথে করে।
একা একা বহুদিন তো থাকলাম, অন্য কারো কোনো লাভ তো তাতে হয় নাই।
কিছুদিন যৌথ জীবন যাপনে কার আর কি ক্ষতি হবে, বলেন?"

বললাম, "ভাল থেকো ঝুমানা। আমার শুভাকাঙ্ক্ষা থাকলো সবসময়ের জন্য।"
ঝুমানা বললো, "জানি"। তারপর এগিয়ে গেল বোর্ডিং ব্রীজের দিকে...