Table of Content

Akhter Hossain
NA
NA
2 articles

ইজ্জৎ আলীর বায়স্কোপ

লেখক: আকতার হোসেন Category: ছোট গল্প (Short Story) Edition: Dhaboman - Eid 2017

 

ছোট বেলা থেকেই ইজ্জৎ আলীর মুখে গন্ধ। গরিবের ঘরে জন্ম নিলে যা হয়, মুখটাকে ব্যবহার করে শুধু খাবারের জন্য। এই অঞ্চলে মিয়া বাড়ি হল সবচেয়ে অবস্থাপন্ন গেরস্ত। ইজ্জৎ আলীর ঘোরাফেরা তাই মিয়া বাড়িকে কেন্দ্র করে। অন্য কেউ দিলে ভাল, না হলে মিয়া বাড়ির রান্না ঘর উঠান কিংবা পুকুর ঘাটের কাছে মাছির মত ঘুরতে থাকে ইজ্জৎ আলী। কোথায় গিয়ে হাজির হলে কতটুকু খাবার পাওয়া যাবে কাউকে সেটা বলে দিতে হত না। বাটি চালান দেবার মত সে নাক চালান দিতে জানত।

মিয়া বাড়ির বড় মিয়ার হাতে ছিল সব ক্ষমতা। তার ছিল তিন বউ। ছোট বউয়ের ছেলেপুলে একজন। যেকোনো কারণে এক সন্তানের পর ছোট বউ আর গর্ভ নিলো না। তার বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে। এতোই ছোট যে ছেলেটি জন্ম না নিলে এখনও তাকে ছোট বলা যেত। বিয়ের আগে যেভাবে সে পুতুল খেলত বিয়ের পর বড় মিয়া তার সাথে সেভাবেই পুতুল পুতুল খেলেছে। যারা পুতুল খেলে অভ্যস্ত তাদের কেউ পুতুল বানালে বড় কষ্ট পায়। সেই কষ্ট ছোট বউও পেয়েছিল। যাই হোক ছোট বউয়ের মনটা ছিল নরম, দান খয়রাতের বেলায় খোলা হাত। একদিন ক্ষুধা পেটে ইজ্জৎ আলী হাজির হল মিয়া বাড়ির দক্ষিণ ভিটায়। ক্ষুধার জ্বালা এতই তীব্র যে পেটের ভেতর থেকে শকুনের ডাক শুনতে পেল। ছোট বউয়ের মেজাজ পরীক্ষা না করে ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। কিছু দিন আগে ‘ভাগ আমার সামনে থেকে’ বলে তাড়িয়ে দিয়েছিল সে। ইজ্জৎ আলী জানতো সেটা ছিল ছোট বউয়ের কথার কথা। তবু মিয়া বাড়ির বউ বলে কথা। পা টিপেটিপে ছোট বউয়ের ঘরের ভেতর উঁকি দিতেই ইজ্জৎ আলীর সব ক্ষুধা তলপেটে নেমে গেল। বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য মিয়া বাড়িতে থাকত একজন প্রাইভেট মাষ্টার। সেই মাষ্টার একটা একটা করে ছোট বউ এর ব্লাউজের বোতাম খুলে দিচ্ছে। চোখের পলকে মেঘের মত উঁকি দিল ছোট বউয়ের ফর্সা পিঠ। তুলতুলে নরম পিঠের উপর প্রাইভেট মাস্টার তিব্বত পাউডার ঢেলে হাত বুলাতে লাগল। কতক্ষণ এই দৃশ্য দেখেছে মনে নেই তবে যতক্ষণ সে দাঁড়িয়ে ছিল ততক্ষণ পেটে কুকুর বেড়াল কিছুই ঢুকতে পারে নি।  

চমৎকার আবিষ্কার। এরপর থেকে ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা না হলে ইজ্জৎ আলী চোখ বন্ধ করে ছোট বউয়ের পিঠের ছবি আঁকত। সাথে সাথেই সুরঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যেত তার ক্ষুধার জ্বালা। বেশ কিছু দিন এভাবেই গেল। কিন্তু শুধু কি পেটের ক্ষুধা মিটলে চলে মনের ক্ষুধা বলেও একটা জিনিস আছে। ইজ্জৎ আলী তাই আরেক দিন দুপুরে মিয়া বাড়ি গিয়ে হাজির। ছোট বউকে দেখবে বলে টিনের ফুটোতে চোখ লাগল কিন্তু কোথাও কাউকে দেখতে পেল না। একে একে সব গুলো ফুটোতে সে চেষ্টা করল। ইজ্জৎ আলী কাউকে দেখতে পেল না অথচ বড় মিয়ার নজরে পড়ল সে। বড় মিয়ার কুঁজো লাঠি গিয়ে পড়ল তার পিঠের ওপর। ভীষণ আঘাত পেল। না খাওয়া পেটে যেমন যন্ত্রণা হয় সেরকম অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত দেহে। ভাগ্যিস সে বড় মিয়ার থেকে জোরে দৌড়াতে পারত তাই বেঁচে গেল সে যাত্রায়।

এখন কি করে সে মিয়া বাড়ির দিকে পা বাড়াবে। একেই বলে গরিবের মরণ। পেট আর মন এক সাথে সুখে রাখা দায়। মন বলে যাই-যাই, পেটও বলে না গিয়ে উপায় নাই। বাস্তবতা হল সেই ঘটনার পর থেকে মিয়া বাড়ির দিকে যেতে সে ভয় পেত। অভিশাপের শীর্ষ ভাগ গিয়ে পড়ল প্রাইভেট মাস্টারের উপর যেন লাঠির বাড়িটা সে-ই দিয়েছিল। রাগে দুঃখে গ্রাম ছেড়ে চলে এলো ইজ্জৎ আলী।

নতুন পরিবেশে নারকেল পাতার ওপর শুয়ে সে তিব্বত পাউডারের গন্ধ পেত। নিঝুম শূন্যতা চারিদিকে তাই বলে কি নিজেকে একা মনে করতো? তা হবে কেন, মিয়া বাড়ির ছোট বউ তাকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে দিত। কল্পনার ধাক্কা খেতে খেতে ইজ্জৎ আলী বয়সের ধাপ অতিক্রম করতে থাকে।

এখন সে গোঁফ ওঠা যুবক। লম্বায় বাপ্পা মজুমদারের মত। চুলও রেখেছে তার মত করে। সিগারেট খেতে শুরু করায় মুখের গন্ধটা ভক করে বেড়িয়ে পরে না। তাছাড়া সুর করে কথা বলতে হয় তাই মুখের ভেতর সারাক্ষণ বাতাস আসা যাওয়া করে। সে কারণেও দুর্গন্ধ কিছুটা কম। ইজ্জৎ আলী উপ-জেলা শহরে এসে ব্যবসা চালু করেছে। বাজারের ঢোকার মুখে তার ব্যবসা। তার ব্যবসার কারণে বাসি পচা জিনিস কিনে বাড়ি ফিরে যায় অনেকে। কেউ বলে পকেট মার হয়ে গেছে তাই বাজার সদাই কিছুই কেনা হল না। আসলে ওরা সকলে ইজ্জৎ আলীর বায়স্কোপ দেখে পকেট খালি করে ফেলে।

টিনের একটা বাক্স সেটার নাম ‘ইজ্জৎ আলী বায়স্কোপ’। চাকার উপর বসানো লাল রঙের এই বাক্সে রয়েছে চারটা গোল গোল জানালা। সেগুলোর মুখ সব সময় বন্ধ থাকে। কেউ পয়সা দিয়ে বায়স্কোপ দেখতে চাইলে ইজ্জৎ আলী খুলে দেয় জানালা। এক সাথে চারজন দেখতে পারে তার বায়স্কোপ। মাঝে মাঝে আবদার করলে শেয়ার করতে দেয়া হয়। যারা মাথার সাথে মাথা ঠেলাঠেলি করে বায়স্কোপ দেখে তারা ভাগাভাগি করে ইজ্জৎ আলীকে পয়সা দেয়। এক টাকা দিয়ে শুরু করলেও এখন তার বায়স্কোপের দাম পাঁচ টাকা। নাইট শো’র দাম দশ টাকা। নবাব সিরাজউদ্দৌলা, কারবালার নদী, সুপার ম্যান, মৌসুমির দুষ্ট হাসি এই জাতীয় কাহিনী হয় দিনের বেলা। রাতের শো’তে চলে বলিউড নায়িকা, মজনুর প্রেম, খোলা জানালা, তিব্বত পাউডার ইত্যাদি।

লম্বা কাগজে বিভিন্ন ছবি জোড়া লাগিয়ে লোহার চিকন রডের সাথে সেগুলোকে পেঁচিয়ে রাখে ইজ্জৎ আলী। জড়ানো ছবি কৌশলে এক পাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যাওয়ার নাম ‘ইজ্জৎ আলী বায়স্কোপ’। পেঁচানো ছবি ধীরেধীরে খুলতে থাকা অবস্থায় সে সুর করে গল্প বলতে থাকে। ম্যাগনিফাইং গ্লাস লাগানো তাই জানালায় চোখ দিতেই ছবিগুলো জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়। যেন ইচ্ছে করলে হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় ছবির মানুষ। নানান বয়সের মানুষ কোমর বাঁকিয়ে দেখতে থাকে বায়স্কোপ। ইজ্জৎ আলীর দরাজ কণ্ঠে গল্পের বয়ান শুনে চোখের পানি ফেলে অনেকে।

‘দেখেন দেখেন সিমারের অমানবিক কাজ

নবীজীর নাতির বুকে করিল আঘাত

ফুরাত নদী লাল হইল চক্ষুর পলকে

আন্ধার রাইতে হাসিল ইসলামের দুশমনে’

অথবা

কি চমৎকার দেখা গেল

কোকিল কণ্ঠী গান ধরিল

ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল গো

মরার কোকিলে।

বাচ্চাদের জন্য রয়েছে সুপারম্যান শো। দৈত্য দানবকে পরাজিত করে তার সুপারম্যান অট্ট হাসি হাসে। বায়স্কোপ শেষ হলে বাচ্চারা বাতাসে গায়ে কিল ঘুষি মারতে মারতে সুপারম্যান হয়ে ঘরে ফিরে যায়। সুপারম্যান কিংবা কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা দেখিয়ে আয় রোজগার হয় না। ইজ্জৎ আলীর আসল আয় হয় নাইট শো থেকে। নাইট শো’তে আবার সুর করে বয়ান দেয়া যায় না। এই সমস্ত দৃশ্যের বর্ণনা উচ্চ স্বরে বলা মানে বিপদ ডেকে আনা। সে কারণে ক্যাসেট প্লেয়ারে গান ছেড়ে দেয়।

‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায়

দেখেছিলাম বায়স্কোপ।

বায়স্কোপের নেশায় আমায় ছাড়ে না’।

ইজ্জৎ আলীর নাইট শোতে মেয়েদের খোলা পিঠের ছবি দেখান হয়। ‘মধুমতী ফটো স্টুডিওতে গোপনে মেয়েদের খোলা পিঠের ফটো তোলা হয়। তারপর সেগুলোকে জোড়া দিয়ে বানানো হয় রাতের ছবি। যাদের ছবি তোলা হয় তারা টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায়, ঘণ্টায় পঞ্চাশ টাকা। মুখ দেখানো হয় না তাই ঝামেলাও নাই। খারাপ ভাল সব ধরণের মেয়রা এ কাজে এগিয়ে আসে। এদের মধ্য দু’একজনের সাথে ইজ্জৎ আলীর ভাব হয়ে যায়। ইজ্জৎ আলীর মুখের গন্ধের কারণে তারা বেশি কাছে আসতে পারে না। মুখ বন্ধ করে আর কতক্ষণ চলে, অন্তরঙ্গ কথা দুরে বসে বলা যায় না। ইজ্জৎ আলী পান খায়, সিগারেট খায়, দাঁতে গুল লাগায় কিছুতে তার মুখের গন্ধ দূর হয়ে না।

ইজ্জৎ আলীর রাতের কাস্টমারদের বেশির ভাগ বাজারের কর্মচারী না হয় দোকানদার। বাড়ি ফেরার পথে একটু চাঙ্গা হতে অনেকেরই ইচ্ছে জাগে। এদের বদলতেই যা আয় উন্নতি। দিনে দিনে ইজ্জৎ আলী গল্পের মাত্রা পরিবর্তন হতে থাকে। রাতের গল্পে নেশা লাগানো কাহিনী যোগ করতে থাকে সে। কাস্টমারদের উৎসুক করে লোহার রড থেকে সে ছবি ছাড়তে থাকে। উত্তেজক গল্পের কারণে কিছুদিনের মধ্যে আয় বেড়ে দ্বিগুণ হল। এতো দিনে নিজেকে সে ব্যবসায়ী মনে করতে শুরু করল। বাজারের পশ্চিম দিকে একটা মাজার আছে। সেই মাজারে জুম্মার দিনে মিয়া বাড়ির ছোট বউ এর নামে সে সিন্নি দেয়। মাজারে বসেই আল্লাহ কাছে কৃতজ্ঞতার প্রকাশ করে।

কিছুদিন হল বায়স্কোপ চালাবার জন্য ইজ্জৎ আলী একজন কর্মচারী নিয়োগ করেছে। নিজ হাতে এখন তাকে লোহার রড ঘুরাতে হয় না। সে শুধু বায়স্কোপের জন্য বয়ান রচনা করতে থাকে আর ‘মধুমতী ফটো স্টুডিও থেকে ছবি যোগার করে আনে। টাকা পয়সার আমদানি ভাল তাই ইজ্জৎ আলীর পেটটাও ফুলতে শুরু করল সাই সাই করে। এখন ইয়া ঠাসা পেট। মিয়া বাড়ির বড় মিয়ার পেট থেকেও বড়। টুলের উপর বসেই এখন বয়ান দেয়। মুরব্বী কিংবা ছাত্র লীগের মাস্তান দেখলে এ টি এম শামুজ্জামানের মত হাত টানটান করে সালাম করে। আজ না বুঝেই একজনকে সালাম দিয়ে তার চোখ কপালে উঠে গেল। মিয়া বাড়ির প্রাইভেট মাস্টার এসেছে নাইট শো দেখতে। ব্যাপারটা নিয়ে সে কিছুক্ষণ ভাবল তারপর মনের সুখে সে বয়ান দিতে শুরু করল।

দেখেন দেখেন দুনিয়ার আজব সৌন্দর্য

চমৎকারে কথা আর কি বা কহিব।

মেঘ কাল আঁধার কালো, ভাল রইল কি

পিঠের উপর ভুবন নাচে বাকি সব ফাঁকি।

শো ভেঙ্গে গেলে একে একে কাস্টমাররা বাড়ি চলে যায়। সবাই পুরুষ অথচ লজ্জার কারণে একে অন্যের থেকে মুখ লুকিয়ে রাখে। প্রাইভেট মাষ্টারও মাথা নিচু করে চুপচাপ চলে যেতে লাগল। ইজ্জৎ আলী তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল ভাই বায়স্কোপ কেমন লাগল। ইজ্জৎ আলীকে মাষ্টার চিনতে পারে নি, চেনার কথাও না। ভাল মন্দ কিছু না বলে মাথা নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে সে অদৃশ্য হয়ে গেল। মাষ্টারের অদৃশ্যে মিলিয়ে যাওয়া দেখে এক ধরণের তৃপ্তি ভেসে ওঠে ইজ্জৎ আলীর চোখে। বুঝতে অসুবিধা হয় না প্রাইভেট মাষ্টার আর মিয়া বাড়ির ছোট বউ এর কাছে যেতে পারে না। ঘটনা সত্য হলে ইজ্জৎ আলীর খুশি হবার যথেষ্ট কারণ আছে।

সেদিনের পর থেকে ইজ্জৎ আলী তার মুখের গন্ধ নিয়ে আর ভাবে না। তার প্রিয় লাল রঙ দিয়ে বায়স্কোপের বাক্স উজ্জ্বল করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং ভাবতে থাকে অসাধারণ এক গল্প। মনের মত একটা বায়স্কোপ বানিয়ে সে হাজির হবে মিয়া বাড়ি। এই গল্পে নায়কের মুখে কোন দুর্গন্ধ থাকবে না, থাকবে না ক্ষুধার জ্বালা। নায়ক ঘোড়া চালাতে জানবে। তার একটা সাদা ঘোড়াও থাকবে। ইজ্জৎ আলী আজ পর্যন্ত ঘোড়া দেখে নি। ঘোড়া নিয়ে সে বিপদে পড়ল। ঘোড়া ডাক শুনতে কেমন, তার চাল চলন জানা দরকার। নাহ সে আর গল্প বানাতে পারছে না। ছোট বউয়ের মুখ ভেসে উঠছে বারবার। ছোট বউ একদিন তাকে বলেছিল ‘তুমি লুডু খেলতে পার’? সে মাথা নেড়ে উত্তর দিয়েছিল ‘না’। তাতে এতোটুকুও রাগ করে নি ছোট বউ। বরং বলেছিল বাজার থেকে লুডু খেলা শিখে আসতে। তারপর তার সাথে লুডু খেলতে হবে। লুডু খেলার কথা সে ভুলেই গিয়েছিল। সামান্য একটু অনুরোধ তাও রক্ষা করতে পারে নি বলে এখন ভীষণ খারাপ লাগছে। তবে ছোট বউয়ের অন্য একটি কথা সে রেখেছে। একদিন দুপুরে গুণ গুণ সুর তুলে ছোট বউ কাঁঠাল গাছের দোলনাতে দুলছিল। ঠিক সেই সময় শুঁকনো মুখে এসে হাজির ইজ্জৎ আলী। ছোট বউ জিজ্ঞেস করল  ‘তুই গান গাইতে পারিস’! ইজ্জৎ আলী ভেবেছিল ছোট বউ জিজ্ঞেস করবে ‘কতদিন পেটে খাবার ঢোকে নি। জাউ হলে চলবে?’ কিন্তু সে সব শোনার সুযোগ হল না। এবারও সে মাথা নেড়ে বলল ‘না’। আর কত সহ্য করা যায়। ছোট বউ বলেই ফেললো  - ‘তবে কি পারিস, শুধু খাবার চাইতে? যা এখান থেকে।’  সময় বদলে গেছে অনেকে। আজ তার কণ্ঠের প্রশংসা করে মানুষ। এই কণ্ঠই দূর করেছে তার পেটের ক্ষুধা।

হঠাৎ উঠে দাঁড়াল ইজ্জৎ আলী। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল এই গভীর রাতে হাঁটতে হাঁটতে সে চলে যাবে মাজারের কাছে। আজকের চাঁদ যেন অন্যদিনের চেয়ে অনেক বড়। আকাশের যেদিকে তাকায় সে দিকেই আলো। ইজ্জৎ আলী শুনেছে চাঁদের নাকি অনেক নাম। কেউ বলে চাঁদ মামা। কেউ ডাকে পূর্ণিমা। চাঁদকে দেয়া তার নিজস্ব একটা নাম আছে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মনের মধ্যে সুখের বাতাস ঢেলে দিয়ে চাঁদকে সেই নাম ধরে ডাক দেয় – ‘ছোট বউ’।